Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

নিয়ম মেনে ননীবালার শেষকৃত্যে আনারুলরা

কেবল মৃত্যুকালীন সময়ে সমাজে দাগ কেটে গেলেন ননীবালা এমনটা নয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:০৯
Share
Save

হরিহরপাড়ার পর এ বার জলঙ্গির ঝাউদিয়া গ্রামে সম্প্রীতির এক নজির গড়ল মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।

মুসলিম প্রধান গ্রামের একমাত্র হিন্দু পরিবারের বৃদ্ধা ননীবালা সরকারের মৃত্যুর পর এলাকার মুসলিমরা কাঁধে তুলে নিলেন তাঁর শেষকৃত্যের যাবতীয় দায়িত্ব। বাঁশ কাটা, খাটিয়া তৈরি থেকে শ্মশান যাত্রা, এমনকি অগ্নিসংযোগের কাজও করল তারা। যা দেখে গ্রামের নানা পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ‘‘এটা আমাদের কাছে অবাক হওয়ার মত কিছু বিষয় নয়, খুব ছোটবেলা থেকে এভাবেই বড় হয়েছি ঝাউদিয়ার সাধারন মানুষের সঙ্গে। এই গ্রামের সকলেই আমাদের পরম আত্মীয়।’’
কেবল মৃত্যুকালীন সময়ে সমাজে দাগ কেটে গেলেন ননীবালা এমনটা নয়। প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষের বাস যে গ্রামে সেই গ্রামে একমাত্র হিন্দু পরিবার হওয়া সত্ত্বেও গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হয়েছিলেন তিনি।

বাম আমলে সিপিএমের গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হয়েও সবার সঙ্গে সু-সম্পর্ক রেখেছিলেন ননীবালা। জলঙ্গির প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএম নেতা ইউনুস সরকার বলছেন, "ননীবালা আমাদের দলের সদস্য হলেও সবার সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল, ফলে ননীবালা শেষ সময়টা যে এত সুন্দর হবে সেটা খুব স্বাভাবিক। যে সময়ে ধর্মীয় বিভেদ সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিচ্ছে দেশ জুড়ে ঠিক সেই সময়ে সীমান্তের গ্রামে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে অন্যরকমের নজির গড়ল।"
সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘দেশ জুড়ে যখন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ধূমায়িত হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে মুর্শিদাবাদ একের পর এক নজির গড়েছে সম্প্রীতির। এখানে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চড়া দিতে পারবে না।’’’’ মাস ছয়েক আগে হরিহরপড়াতেও এক হিন্দু বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে শ্মশানযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন মুসলিমরা। জলঙ্গির ঝাউদিয়াতেও ননীবালার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সবটা সামলেছেন সুখচাঁদ আলি, একসাদ আলি, আনারুল ইসলামরা।

সুখচাঁদ বলছেন, "আপনাদের কাছে এটা নজির মনে হতে পারে কিন্তু ননীবালা সরকার যেভাবে আমাদের সমাজে মিশে ছিলেন, তার স্নেহে আমরা যেভাবে বড় হয়েছি তা ভোলার নয়। এটা আমাদের দায়িত্ব ছিল, সেই দায়িত্বটা পালন করেছি মাত্র।" আর একসাদ আলি মণ্ডল বলছেন, "ননীবালা ও তার পরিবার আলাদা কোন সম্প্রদায়ের সেসব আমাদের কখনও মাথায় আসেনি। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর নিকট আত্মীয়ের মতোই আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি। কারণ তারাও যে আমাদের আত্মীয় ভাবতেন।" ননীবালার ছেলে বিভূতি রঞ্জন সরকার বলছেন, "আমাদের কাছে এটাই স্বাভাবিক, আমাদের আত্মীয়রা কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। এই গ্রামে বাস করতে গিয়ে আলাদা কিছু কখনও বুঝতে পারিনি।’’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় ৮৫ বছরের ননীবালার। আর তার মৃত্যুর পর গোটা গ্রাম ঝুঁকে পড়েছিল তাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য। কিন্তু সেখানেই শেষ হয়নি, তার শ্মশান যাত্রার জন্য খাটিয়া তৈরির বাঁশ কাটা থেকে খাটিয়া তৈরি এমনকি জলঙ্গি সাহেবরামপুর শ্মশানে পৌঁছনো সবটাই করেছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। জলঙ্গি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের শুক্লা সরকার বলছেন, ‘‘আমরা সকলেই চাই এমন সম্পর্ক গড়ে উঠুক মানুষের মধ্যে। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে এটাই খুব স্বাভাবিক। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ ননীবালার পাশে এভাবে দাঁড়িয়েছে তার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।’’

Communal Harmony Muslim Hindu

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।