Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Murshidabad Murder Case

মাকে শেষ ফোন সাবিনার, ‘বাঁচাও-বাঁচাও’ চিৎকারের পর নিস্তব্ধতা, মুর্শিদাবাদের শামিমা বুঝলেন, সব শেষ!

শনিবার দুপুরে দৌলতাবাদের প্রাথমিক স্কুলের সামনে খুন হন উচ্চমাধ্যমিক পাশ সাবিনা খাতুন। অভিযোগ, ছুরি দিয়ে তাঁকে খুন করেন সহপাঠী মিঠু শেখ। ফোন করে ‘প্রেমিকা’কে ডেকে আনেন মিঠু।

Murshidabad Murder Case

(বাঁ দিকে) মৃতা সাবিনার দেহ পড়ে মাঠে। (ডান দিকে উপর থেকে) সাবিনা খাতুন এবং অভিযুক্ত মিঠু শেখ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
দৌলতাবাদ শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২৪ ১৫:০০
Share: Save:

গতকাল দুপুরেও ছটফটে মেয়েটা ছিল। আজ নেই! মানতেই পারছেন না মেয়ে-হারা শামিমা বিবি। ‘সাবিনা-সাবিনা’ বলে কাঁদতে কাঁদতে মাঝেমাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। জ্ঞান ফিরলে আবার মেয়ের কথা। রবিবার সকালেও মেয়ের ছবি বুকে আগলে বসেছিলেন মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদে ‘প্রেমিকের’ হাতে খুন হওয়া সাবিনার মা। বার বার স্বগতোক্তির মতো বলে চলেছেন, মেয়ের সঙ্গে শেষ বার হওয়া কথাগুলো। ফোনে মেয়ের কাঁদো কাঁদো গলায় ‘বাঁচাও-বাঁচাও’ শব্দ কানে বাজছে শামিমার। সদ্য মেয়েকে হারানো মা চান দোষীর মৃত্যুদণ্ড।

শনিবার দুপুরে দৌলতাবাদের প্রাথমিক স্কুলের সামনে খুন হন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ সাবিনা খাতুন। অভিযোগ, ছুরি দিয়ে তাঁর গলার নলি কেটে খুন করেন সহপাঠী মিঠু শেখ। ফোন করে ‘প্রেমিকা’কে ডেকে এনেছিলেন মিঠু। পুলিশের একটি সূত্রে খবর, সাবিনাকে খুনের সময় এক জনই প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তিনি সাবিনার বান্ধবী। বান্ধবীর রক্তমাখা শরীর দেখে জ্ঞান হারান সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ওই তরুণী। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মিঠু এবং সাবিনা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে।

সাবিনা এ বারই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিলেন। লালবাগ কলেজে ভর্তির ইচ্ছা ছিল। নিম্নবিত্ত পরিবার। বাড়ি আর আসবাবপত্রে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। শামিমার স্বামী, সাবিনার বাবা শরিফুল ইসলাম রুজির টানে ভিন্‌রাজ্যের বাসিন্দা। মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই চেষ্টা সব সময় করে এসেছেন। সাবিনার পরিবারের লোকজন জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হতেই মেয়েকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছিলেন শরিফুল। শনিবার সেই ‘কম্পিউটার সেন্টারে’ যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সাবিনা। শামিমা বলেন, ‘‘শনিবার কম্পিউটার সেন্টার থেকে বেরিয়ে মেয়ে ফোন করেছিল। ওর এক বান্ধবীর সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। তখন ফোনেই ছিল। ফোনে হঠাৎ শুনতে পেলাম, ‘মেরে ফেলল! মেরে ফেলল! মিঠু মেরে ফেলল!’ বলে একটা চিৎকার।’’ ওই চিৎকার শুনেই আমি ছোটাছুটি শুরু করি। কিন্তু কোথায় যাব, বুঝতে পারিনি। ফোনে শুনতে পাচ্ছি, মেয়ে চিৎকার করছে বাঁচানোর জন্য। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সব চিৎকার বন্ধ হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম, সব শেষ...’’ কথা বলতে বলতেই জ্ঞান হারালেন শামিমা।

একটু পরে ধাতস্থ হয়ে শামিমা বলেন, “শনিবারই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মার্কশিট আনার কথা ছিল সাবিনার... তার আগে সব শেষ হয়ে গেল।” জোর করে গলায় খানিকটা জোর এনে কান্নাভেজা চোখে সাবিনার মায়ের সংযোজন, ‘‘মেয়ে ফিরবে না। দোষীও যেন বেঁচে না ফেরে।’’

টালির চাল, বাঁশের বেড়া দেওয়া সাবিনার বাড়ির সামনে ঘিরে বসে প্রতিবেশীরা। মৃতা তরুণীর মা-ঠাকুমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন সবাই। মেয়ের আবদার, খুনসুটির ছোট ছোট সমস্ত কথা বলে চলেছেন সাবিনার মা। মাঝেমধ্যেই কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারাচ্ছেন ১৭ বছরের মেয়েকে হারানো মা।

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Case Crime Man killed Girl Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy