অবৈধ নেশামুক্তি কেন্দ্রের হদিশ । প্রতীকী চিত্র।
কোনও রকম নজরদারি ছাড়াই জেলায় চলছে বেসরকারি নেশামুক্তি কেন্দ্র। এই সব নেশামুক্তি কেন্দ্রের কোনও বৈধ অনুমোদন আছে কি না কিংবা নিয়ম মেনে রোগী ভর্তি হচ্ছে কিনা, চিকিৎসা কী ভাবে চলছে, তার উপরে কোনও প্রশাসনিক নজরদারিও নেই বলে অভিযোগ। ফলে, নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলিতে কী চলছে, তা বাইরে থেকে কেউ জানতেই পারছেন না।
অথচ, যে কোনও নেশামুক্তি কেন্দ্রের নিয়ম মেনে সমাজকল্যাণ দফতর থেকে অনুমোদন বা রেজিস্ট্রেশন করানোর কথা। সেই বৈধ অনুমোদন জেলার কতগুলি কেন্দ্রের রয়েছে, বর্তমানে তা নিয়েই দেখা দিয়েছে ঘোরতর সংশয়।
সম্প্রতি কলকাতার এক তরুণীকে কল্যাণীর এক নেশামুক্তি কেন্দ্রে আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। তার পরেই জেলার অনুমোদন-হীন নেশামুক্তি কেন্দ্রের ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নদিয়া জেলা সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, জেলায় সরকারি নেশামুক্তি কেন্দ্র একটিও নেই। তবে কোনও সংস্থা নেশামুক্তি কেন্দ্র করতে চাইলে তাকে নিয়মমাফিক আবেদন করতে হবে সমাজকল্যাণ দফতরে। আবেদনের ভিত্তিতে ওই সংস্থার শেষ তিন বছরের আর্থিক লেনদেনের রিপোর্ট, অডিট রিপোর্ট দেখা হয়। সেই সঙ্গে সংস্থার পরিকাঠামো, কর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাঁদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয় দেখে অনুমোদন দেওয়া হয় বা রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হয়। অথচ, এ ক্ষেত্রে এই জেলায় কতগুলি বেসরকারি সংস্থাকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বা কতগুলি বেসরকারি নেশামুক্তি কেন্দ্র আছে, সেই তথ্যও দফতর থেকে পাওয়া যায়নি মঙ্গলবার।
ইতিমধ্যেই কল্যাণী পুরসভার এ ব্লকে এক সংস্থার মাদকাসক্ত আবাসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে কলকাতার এক তরুণীকে ভর্তি করা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। অভিযোগ, ওই তরুণীর অনুমতি ছাড়াই বাবা-মা তাঁকে সেখানে ভর্তি করেন। যদিও দাবি, ওই তরুণী পুরোপুরি নেশাগ্রস্ত ছিলেন না। কোনও চিকিৎসকের ভর্তি করানোর প্রেসক্রিপশনও ছিল না। যদিও মঙ্গলবার সকালে তরুণীর বন্ধুদের অনড় দাবিতে শেষ পর্যন্ত নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে তাঁকে ছাড়তে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ।
এই ঘটনার পর তরুণীর বন্ধুদের অভিযোগ, ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের রেজিস্ট্রেশন নম্বর কর্তৃপক্ষ দেখাতে পারেননি।
জানা গেল, এই নেশামুক্তি কেন্দ্রটি বছর দশেক আগে শুরু হয়। বছর দশেক আগে একটা কমিটি তৈরি করে সংস্থার অনুমোদন করানো হয় বিধাননগরের তড়িৎমিশন নামে এক সরকারি দফতর থেকে। সেই রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে গেলে ২০২১ সালে নদিয়া জেলার অবর নিবন্ধকের দফতর থেকে সংস্থার রেজিস্ট্রেশন করানো হয় সামাজিক কাজকর্মের জন্য।
কিন্তু নেশামুক্তি কেন্দ্র চালানোর জন্য অনুমোদন কোথায়? সংস্থার সভাপতি প্রণব বিশ্বাসের দাবি, “কল্যাণী শহরের সব নেশামুক্তি কেন্দ্র সংস্থার রেজিস্ট্রেশনেই চলছে। যদি সমাজকল্যাণ দফতরের অনুমোদন লাগে, সেটা করিয়ে নেওয়া হবে।”
অন্য দিকে, জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক শমিতা ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের দফতর থেকে অনুমোদন নিয়ে জেলায় কোনও বেসরকারি নেশামুক্তি কেন্দ্র চলছে না। আর নজরদারির বিষয়ে উচ্চ কর্তৃপক্ষ যে ভাবে নির্দেশ দেবেন, সেই ভাবেই পদক্ষেপ করা হবে।”
বর্তমানে কেন্দ্রটি মাদকাসাক্তের আবাসিক পুনর্বাসন কেন্দ্র। সেখানে পুরুষ ভর্তি রয়েছেন ৩০জন। মহিলা ভর্তি রয়েছেন ১৮ জন। খাওয়া, চিকিৎসা ইত্যাদি খরচ বাবদ মাসে এক জনের থেকে ছয় হাজার টাকা নেওয়া হয়। কর্মী রয়েছেন ১৪ জন। রোগীদের চিকিৎসার জন্য কয়েক জন চিকিৎসকের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে ওই কেন্দ্রের তরফে দাবি।
পাশাপাশি, জেলার সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, জেলার বিভিন্ন জায়গায় বেসরকারি নেশামুক্তি কেন্দ্র রয়েছে। এর কোনওটির এই দফতরের অনুমোদন নেই। বিভিন্ন সময়ে কোনও কোনও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাঁরা অভিযোগও পান।
তার পরেও কেন ওই কেন্দ্রগুলিতে নজরদারি চালানো হয় না? ওই দফতরের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, নজরদারি চালানোর মতো পর্যাপ্ত কর্মী কোথায়? তবে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কখনও-কখনও কোনও কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়।a
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy