কোদাল নিয়ে রাস্তার নর্দমা পরিষ্কার করছেন যুগ্ম বিডিও সুরঞ্জন বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র
রাস্তার ধার দিয়ে গিয়েছে ইটের তৈরি সরু নর্দমা। তার এক দিকে কয়েকটি জায়গার ইট ভেঙে নর্দমায় পড়েছে। এর ফলে নিকাশি ব্যবস্থার মুখ আটকে গিয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে নোংরা-আবর্জনা এসে নর্দমার মুখে আটকে রয়েছে। এ সব কারণে নিকাশি নালা দিয়ে জল ঠিকমতো যাচ্ছে না। জমা জলে আবার কয়েক জায়গায় মশার লার্ভা বংশবিস্তারও করে ফেলেছে।
এ হেন অবস্থায় নর্দমা সাফাই করতে এগিয়ে এলেন খোদ বিডিও। রবিবার সকালে গায়ে নীল রঙের গেঞ্জি, কোমরে গামছা বেঁধে, হাতে কোদাল নিয়ে এক ব্যক্তিকে নর্দমা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। তিনি কল্যাণী ব্লকের যুগ্ম বিডিও সুরঞ্জন বিশ্বাস। পরিচিত কয়েক জন বলে উঠেন, “স্যর, আপনি ড্রেন পরিষ্কার করছেন!”
অপরিচিত মানুষটিকে এই ভাবে নর্দমা পরিষ্কার করতে দেখে এলাকার মানুষ ভিড় জমান। এলাকার মানুষকে ভিড় করতে দেখে পথচলতি মানুষও দাঁড়িয়ে বিডিও-র কাণ্ড দেখতে থাকেন। ওই সময়ে এলাকার ছেলেরা এগিয়ে কয়েক জন তাঁকে নিজে হাতে নর্দমা সাফই করতে মানা করেন। আবার, কেউ কেউ বিডিও-কে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে হাতে কোদাল নিয়ে নর্দমা পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়েন।
স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষ্মী হালদার এবং কলেজ-পড়ুয়া প্রিয়ালক্ষ্মী হালদার এ দিন বলছেন, “স্যর আমাদের খুব ভাল শিক্ষা দিয়ে গেলেন যে, নিজের এলাকা নিজেদেরই পরিষ্কার করে রাখা উচিত। নর্দমা পরিষ্কারে লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু নেই। তাঁর মতো এক জন সরকারি আধিকারিক যে ভাবে কোদাল নিয়ে নোংরা পরিষ্কার করলেন, তাতে আমাদেরই লজ্জা লাগছিল। অথচ, বিডিও স্যরের কোনও বিকার নেই!”
তাঁরা আরও বলেন, “এর থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামি দিনে আমাদের উচিত নর্দমা এবং এলাকা পরিষ্কার করে রাখা। যাতে আমরা ডেঙ্গির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি।”
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ডলি মোদক বলেন, “আমি স্থানীয় বাসিন্দাদের এই নর্দমা পরিষ্কার করতে বলেছিলাম। তাঁরা সে ভাবে আগ্রহ দেখাননি। প্রশাসন থেকে নর্দমা পরিষ্কার করানোর কথা বলে অনেকেই দায় এড়িয়েছেন। কেউ রাজি হচ্ছেন না দেখে বিষয়টি আমি স্যরকে জানাই। এ দিন তিনি নিজেই এসে নর্দমা পরিষ্কারে নেমে যান।”
হাতে কোদাল নিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে সুরঞ্জন বলেন, “এলাকার মানুষ নর্দমা পরিষ্কার করতে চাইছেন না। আবার, নিয়ম অনুযায়ী একশো দিনের কাজের অর্থে এই কাজ করা যায় না। এলাকার মানুষকে নিজেদের স্বার্থে এই কাজ করতে হবে। তাঁরা কিছু করছেন না বলে আমি ওই পঞ্চায়েত সদস্যাকে বলেছিলাম— আপনি থাকবেন, আমি নিজে নর্দমা পরিষ্কার করব। সেটাই করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমায় দেখে এলাকার ছেলেরা নর্দমা পরিষ্কার করতে এগিয়ে এসেছে। এর চেয়ে ভাল কিছু হতে পারেন না।”
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে কল্যাণী ব্লকের কাঁচড়াপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর চাঁদামারি এলাকায় রাস্তার এক ধার দিয়ে ১৩০ মিটার নিকাশিনালা তৈরি হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ওই নর্দমা অবৈজ্ঞানিক ভাবে তৈরি হওয়ায় কিছু দিন পর থেকেই এলাকার মানুষ ভুগতে থাকে। ঠিকমতো জল যায় না। তার উপর একটা অংশের ইট ভেঙে নালায় পড়ে ছিল। অভিযোগ, এলাকার মানুষও বিভিন্ন আবর্জনা এই নর্দমায় ফেলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy