ফাইল চিত্র। নিজস্ব চিত্র।
কালীপুজোর আগের দিন, ভূত চতুর্দশীর সকালে বাজারে গিয়ে চোদ্দোশাক কিনতেই হয়। এ প্রথা বহুকালের। সে কালে আশ্বিন আর কার্তিক মাস দু’টিকে ‘যমদংস্টা’ বলা হত। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে বঙ্গদেশে রোগের প্রকোপ সব থেকে বেশি ছিল। ষোড়শ শতকের নব্যস্মৃতির অন্যতম রূপকার স্মার্ত রঘুনন্দন তাঁর অষ্টবিংশতি তত্ত্বের অন্যতম গ্রন্থ ‘কৃত্যতত্ত্ব’-এ এই সময়কাল প্রসঙ্গে আর এক প্রাচীন স্মৃতির গ্রন্থ ‘নির্ণয়া-মৃত’-এর মত অনুসরণে চোদ্দো শাকের উল্লেখ করেছেন। অনেকে বলেন আয়ুর্বেদের জনক বলে কথিত ধন্বন্তরির সম্মানে তাঁর জন্মতিথি কার্তিকে কৃষ্ণা চতুর্দশীতে চোদ্দো শাক খাওয়ার প্রচলন। মনে রাখতে হবে তখনও হাত বাড়ালেই অ্যান্টিবায়োটিক ছিল না।
সে কালের পঞ্জিকা অনুযায়ী চোদ্দো শাক হল—ওল, কেও, বেতো, কালকাসুন্দে, নিম, সর্ষে, শালিঞ্চে, জয়ন্তী, গুলঞ্চ, পলতা, ভাঁট, হিঞ্চে বা হেলেঞ্চা, শুষনি ও শৌলক বা শুলকা শাক। কিন্তু সে রাম এবং অযোধ্যা দুইয়ের কোনওটিই আর নেই। রয়ে গিয়েছে কেবল প্রথাটুকু। সবথেকে বড়কথা আজকের সময়ে ওইসব শাকের অনেকগুলোই এখন পাওয়া দুষ্কর। তাই চোদ্দো শাকে বদল এনেছেন পুষ্টিবিদেরা। চোদ্দো শাকের তালিকায় নতুন করে সাজিয়েছেন। যাতে থাকছে পালং শাক, লাল শাক, কলমি শাক, সর্ষে শাক, মুলো শাক, পুঁই শাক, মেথি শাক, পাট শাক, ছোলা শাক, হেলেঞ্চা শাক, লাউ শাক, কুমড়ো শাক, নটে শাক এবং কচু শাক।
পুষ্টিবিদ অঙ্কিতা দাসের মতে, ‘‘এই শীতের মরশুমে শাকের উপকারিতা তুলনাহীন। বর্ষাকালে শাক খেতে বারণ করা হয়। কেন না ওই সময়ে জলে কাদায় বেড়ে ওঠা শাকে প্রচুর জীবাণু থাকার সম্ভবনা থাকে। হজম কম হয়। ফলে অনেক দিন ধরে দেহে শাকজাত খাদ্যগুণ প্রবেশ করে না। এরপর ঋতু পরিবর্তন হয়ে শুকনো শীত আসতেই ভীষণ জরুরি হয়ে পড়ে নিয়মিত শাক খাওয়া। হয়তো সেই কারণেই একাধিক শাকের তালিকা করে প্রাচীন কালে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা মানুষকে এই বিষয়ের অবগত করতে চেয়েছিলেন।"
তিনি জানান, পুষ্টিগুণের পাশাপাশি থাকে তন্তু বা ফাইবার। শাক খেলে শরীরে জলধারণ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। সেই সঙ্গে ভিটামিন এবং মিনারেল প্রচুর পরিমাণে থাকে। যেমন— ক্যারোটিন, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি ও কে, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন ইত্যাদি। একই সঙ্গে শাক অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট এবং জীবাণু প্রতিরোধী। শাকের আরও বড় একটি কাজ হল কৃমি নাশ করা। ফলে শীতের শুরু থেকেই শাক খাওয়া শুরু করতে হয়। শুষ্ক এই ঋতুতে শরীরের আদ্রতা বজায় রাখে শাক। অনিদ্রা দূর করা, বিষণ্ণতা কাটানো এবং ‘মুড সুইং’ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে। অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন কমাতে, উচ্চ রক্তচাপ, সুগার এবং ডায়বেটিক রোগীদের জন্য শাকের বিকল্প কমই আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy