Advertisement
E-Paper

ক্যানসারের যন্ত্রণাকে হার মানিয়ে পরীক্ষায় তনুশ্রী

তনুশ্রী জাগুলি নেতাজি বিদ্যাপীঠ স্কুলের ছাত্রী। বাড়ি চাকদহের ভান্ডারবাড়ি নেতাজিবাজার এলাকায়। তার পরীক্ষা কেন্দ্র চাকদহের পানুগোপাল হাইস্কুল।

হাসপাতালের বিছানায় বসে পরীক্ষা। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের বিছানায় বসে পরীক্ষা। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৮:০৩
Share
Save

ক্যানসারের অসহ্য যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছে শরীর। তবুও মেয়েটি পরীক্ষা দেবেই। কোনও প্রতিকূলতাই মানতে নারাজ সে। বাধ্য হয়ে তাকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতালে। ছাত্রীটিকে দেওয়া হল যন্ত্রণা কমানোর ইনজেকশন। নাছোড় উচচমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তনুশ্রী বিশ্বাস খাতা টেনে নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় বসেই লিখতে শুরু করে। মারণরোগ ক্যানসারের সঙ্গে, প্রবল অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে এ ভাবেই বুধবার পরীক্ষা দিল সে।

তনুশ্রী জাগুলি নেতাজি বিদ্যাপীঠ স্কুলের ছাত্রী। বাড়ি চাকদহের ভান্ডারবাড়ি নেতাজিবাজার এলাকায়। তার পরীক্ষা কেন্দ্র চাকদহের পানুগোপাল হাইস্কুল। খুব বেশি দিন হয়নি, ১২টি কেমোথেরাপি শেষ হয়েছে তনুশ্রীর। অসম্ভব দুর্বল শরীর। আধ ঘণ্টা বই নিয়ে পড়তে বসলেই অসহ্য মাথাযন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। সেই সঙ্গে রয়েছে বিরামহীন কাশি আর মাঝে মাঝেই রক্তবমি। পরীক্ষা শুরুর দু’দিন আগেই তনুশ্রীর কাশি-রক্তবমি হয়েছে। সকলেই ভেবেছিল, এ বার হয়তো মেয়েটার পরীক্ষা দেওয়া হবে না। কিন্তু হার মানেনি তনুশ্রী। বলেছিল— “যাই হয়ে যাক, পরীক্ষা আমি দেবই। কোনও কিছুই আমায় আটকাতে পারবে না।” সত্যিই তাকে আটকাতে পারেনি ক্যানসারের মতো মারণরোগও। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েও হার মেনেছে তার ইচ্ছাশক্তির কাছে।

কিন্তু ক্যানসার তো সহজে ছেড়ে দেবে না। প্রথম দিনের পরীক্ষার ধকল সহ্য হয়নি শরীরের। দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে শুরু হয় অসহ্য যন্ত্রণা। সঙ্গে কাশি। কিছুটা রক্তবমিও হয়। কিন্তু তার পরেও ওই পরীক্ষার্থীকে দমিয়ে রাখা যায়নি। যন্ত্রণার ওষুধ খেয়ে দাদার সঙ্গে রওনা হয়েছিল পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে। পরীক্ষা দিতে বসেও যায়। কিন্তু যন্ত্রণাটা আরও বাড়তে শুরু করে। কুঁকড়ে যায় শরীর। সকলেই বারণ করে পরীক্ষার ধকল নিতে। কিন্তু যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতেও সে বলে— “পরীক্ষা আমি দেবই।” একপ্রকার তার জেদের কাছে হার মেনেই মেয়েটিকে নিয়ে আসা হয় চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে।

দশম শ্রেণিতে ওঠার কিছু দিন পর থেকেই ওই পড়ুয়ার শরীরে সমস্যা দেখা দেয়। তার পর চলে গিয়েছে অনেকটা সময়। ক্রমশ গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের পর তার ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু হয়। শুরু হয় জীবন-মরণ লড়াই। তারই মধ্যে সুযোগ পেলেই বই নিয়ে বসে পড়ে তনুশ্রী। শরীর সঙ্গ দেয় না। একটু বই নিয়ে বসলেই মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু থেমে থাকেনি সে। পড়াশোনা আর চিকিৎসা— দুটো লড়াই এক সঙ্গে চলতে থাকে। এরই মধ্যে শুরু হয় কেমোথেরাপি। এক এক করে ১২টি কেমো দেওয়া হয় তাকে। এ দিন তনুশ্রী বলে, “পরীক্ষা দিয়ে এসে ঘুমিয়ে যাই। এই শরীরে আর পারি না। ফের রাতে উঠে পড়তে বসি। পরের দিনের প্রস্তুতি নিই।”

কিন্তু এত খারাপ শরীরে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার জেদ কেন? জোরালো গলায় তনুশ্রীর জবাব— “আজ হোক বা কাল, সুস্থ হব। এখন প্রস্ততি না নিলে জীবনের সঙ্গে লড়াই করব কী ভাবে?”

Cancer Patient HS Examination 2023 Chakdaha

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।