নামেই হাসপাতাল। সেখানে না আছে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, না প্রয়োজনীয় নার্স। ২৪ ঘণ্টা তো দূর অস্ত, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টার বাইরে চিকিৎসাই পাওয়া যায় না। মুর্শিদাবাদের বহরমপুর শহরের নামকরা দুই বেসরকারি হাসপাতাল এবং বেশ কয়েকটি নার্সিংহোমের অবস্থা চাক্ষুষ করে রিপোর্ট তৈরি করল রাজ্যের প্রতিনিধি দল।
সম্প্রতি ‘সারপ্রাইজ় ভিজ়িট’-এ বহরমপুরে এসেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশনের একটি দল। বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় অব্যবস্থা দেখে কার্যত বিস্মিত তারা। কোথাও কোথাও দেখা গেল কেবলমাত্র টেকনিশিয়ান এবং আয়া দিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা চলছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বহরমপুরে সরকারি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার জেলায় আসে স্বাস্থ্য কমিশনের চার জনের একটি প্রতিনিধি দল। বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কমিশনের প্রতিনিধিরা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে বহরমপুরের পাঁচটি সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যপরিষেবা সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন। তাতে জেলার হাসপাতালগুলি বিশেষত বেসরকারি হাসপাতালে বড়সড় অব্যবস্থা লক্ষ্য করে স্বাস্থ্য কমিশনের প্রতিনিধি দল। সূত্রের খবর, হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে এসে হয়রানির অভিযোগ তোলে রোগীর পরিবার। তদন্তে প্রশ্ন উঠেছে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলির গুণগত মান নিয়েও। আইসিইউ-র যথাযথ পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও আইসিইউ ব্যবস্থা সচল রাখার নামে রোগীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন:
হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে পরিদর্শক দলের নেতৃত্বে থাকা বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ থেকে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছিলাম। তাই আমরা সারপ্রাইজ় ভিজ়িট করতে বহরমপুরের বড় হাসপাতালগুলিতে গিয়েছিলাম। তাতে বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। আমরা যথাযথ জায়গায় রিপোর্ট পেশ করব।’’ সূত্রের খবর, বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে গাফিলতির ছবি উঠে এসেছে রিপোর্টে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোথাও পর্যাপ্ত নার্স নেই। বেশ কিছু জায়গায় শুধুমাত্র আয়া দিয়ে পরিষেবা চালানো হচ্ছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ওটিতে প্রশিক্ষিত ‘আরএমও’-এর অভাবও দেখছেন প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন:
পরে স্বাস্থ্য কমিশনের পক্ষে থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানানো হয়, ‘‘মুর্শিদাবাদে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের মৃত্যুর সংখ্যা রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গত বছর ১৭০ জন মা মারা গিয়েছেন বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে। এর মূল কারণ সব সময় চিকিৎসায় গাফিলতি নয়, এর মূল কারণ হল সচেতনতার অভাব। এই জেলায় বাল্যবিবাহ ও অপরিণত শিশু প্রসবের হারও বেশি। অপরিণত মা হয়তো বাচ্চা নেওয়ার জন্য বাচ্চা এবং তাঁর মা-ও মারা যান। এটা নিয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্প করার কথা ভাবছি।” সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য কমিশনের ওই প্রতিনিধি দল জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে ‘ডিটেইলড রিপোর্ট’ চান।