বিহারের কুন্দনই ডাকাতির মূলচক্রী। —ফাইল চিত্র।
বিহারে বসে নদিয়ার রানাঘাটের গয়নার শোরুমে ডাকাতির ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ চূড়ান্ত করে ব্যবসায়ী রাজু ঝা খুনে অন্যতম অভিযুক্ত কুন্দনকুমার সিংহ। পুলিশ আটকাবে এবং গুলির লড়াই যে হবে, তা আগেই ধরে নিয়েছিল ডাকাতদলের ‘সর্দার’ কুন্দন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ এ-ও জানতে পেরেছে, ডাকাতির আগে এক মাস এলাকা রেইকি করত কুন্দনের লোকজন। এ জন্য বিহার থেকে নদিয়ায় এসে বাড়িভাড়া করেও থাকত তারা।
গত মঙ্গলবার রানাঘাটে একটি সংস্থার গয়নার শোরুমে ডাকাতি হয়। প্রায় একই সময়ে ওই সংস্থারই পুরুলিয়ার শোরুমেও লুটপাট হয়। রানাঘাটে অবশ্য ডাকাতদলের কয়েক জনকে পাকড়াও করে পুলিশ। তার পর উঠে আসে একাধিক তথ্য। জানা গিয়েছে, ডাকাতির মূলচক্রী কুন্দন ডাকাতির জন্য মোট ১৫ সদস্যের একটি দল তৈরি করে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দলে আবার কুন্দনের বিশ্বস্ত চার সদস্য ছিল। তাদের নিয়ে মাস দেড়েক আগে কল্যাণীর বি-ব্লকে ঘরভাড়া নেয় কুন্দন। সেখান থেকে টানা এক মাস প্রতি দিন রেইকি করত তারা। ডাকাতির এক সপ্তাহ আগে দলের অন্য সদস্যেরা ঝাড়খণ্ড থেকে পাকুড় হয়ে ফরাক্কায় প্রবেশ করে। বাকি সদস্যেরা রেলপথে শিয়ালদহ থেকে ব্যারাকপুর আসে। নাইন এমএম পিস্তল থেকে গুলি ছুড়তে দক্ষ এমন তিন ‘শুটার’ আসানসোল থেকে এসে ডেরা বাঁধে কল্যাণী শিল্পাঞ্চলে। ডাকাতির আগে বেশ কয়েক বার পরিকল্পনা সংক্রান্ত বৈঠক হয় তাদের।
পুলিশ সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, গয়নার শোরুমে ডাকাতির এক দিন আগে প্রয়োজনীয় আগ্নেয়াস্ত্র এসে পৌঁছে যায় ডাকতদলের হাতে। অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং কার্তুজ মজুত করে রাখে কুন্দন। ঘটনার দিন তিনটে আলাদা আলাদা ‘পয়েন্ট’ থেকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ওই ডাকাতদল। পাশাপাশি, পুলিশি বাধার সম্মুখীন হলে তিনটি আলাদা দলে ভাগ হয়ে বিভ্রান্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যদিও ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ পৌঁছে যাওয়ায় হতচকিত হয়ে পড়ে ডাকাতদল। গয়নার শোরুম থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে যেখানে প্রধান রাস্তা তিনটি ভাগে ভাগ হয়েছে, সেখানে দ্বিমুখী আক্রমণ চালায় পুলিশ। কুন্দন নিজে পালাতে সক্ষম হয়। কিন্তু এএসআই রতন রায়ের পুলিশের গুলিতে আহত হয় ডাকাতদলের দুই সদস্য। পরে গ্রেফতার হয় মোট পাঁচ জন। কুন্দনও ধরা পড়ে।
আসানসোল শিল্পাঞ্চল কিংবা ঝাড়খণ্ড লাগোয়া অবৈধ কয়লা খাদানের রাশ কোন গ্যাংয়ের হাতে থাকবে তা অনেকটাই নির্ভর করত নাকি এই কুন্দনের উপরে। বিহারের বৈশালী জেলার বছর কুড়ির এই যুবকের সমর্থন যে দিকে থাকত, সেই দলেরই ‘নিয়ন্ত্রণে’ থাকত শিল্পাঞ্চল এবং খনি অঞ্চলের অবৈধ কারবার। অপরাধ সংগঠনের পর নিরাপদ ডেরায় আত্মগোপনের সুযোগ, পুলিশি নজরদারি এড়াতে ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি— পুলিশের চোখে ধুলো দিতে এ সব করে বেড়াত কুন্দন। ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে রাজ্য পুলিশের চার সদস্যের একটি দল বিহার পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে বিহারে তার বাড়ি এবং সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি এবং জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে এই সব তথ্য পেয়েছে। রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কে কান্নান বলেন, ‘‘বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আমরা তদন্ত চালাচ্ছি। ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত প্রত্যেকের বাড়ি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। ওদের ট্র্যাক রেকর্ড খতিয়ে দেখার কাজ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy