Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2022

রাজার ছেলেকে বাঁচাতে মানত করেছিলেন, কার্যসিদ্ধির পর দুর্গাপুজো শুরু করেন বারোভুঁইয়াদের দেওয়ান

মাছ ভোগ দেওয়ার সময় নারায়ণ শিলাকে বেদি থেকে নামিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। নবমীর দিনে শাক, ন’রকমের ভাজা-সহ নানা রকম মিষ্টি ভোগ দেওয়া হয়। দশমীতে কচুর শাক ও পান্তা ভাতের ভোগ দেওয়া হয়।

১৭৫৩ সালে পাকা দালান করে সেখানে জাঁকজমক করে দুর্গা পুজো শুরু হয়।

১৭৫৩ সালে পাকা দালান করে সেখানে জাঁকজমক করে দুর্গা পুজো শুরু হয়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:২৭
Share: Save:

বারোভুঁইয়ার অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্য যুদ্ধ করতে যাবেন। শিশু রাজপুত্রকে আগলে রাখার ভার তুলে নেন দেওয়ান দুর্গারাম চৌধুরী। রাজার ছেলের প্রাণ যাতে বাঁচাতে পারেন, দুর্গার কাছে মানত করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিলেন। রাজার কোলে ছেলে ফিরিয়ে দিয়ে নদিয়ার ধোড়াদহে শুরু করেন দুর্গাপুজো। কয়েকশো বছর ধরে চলছে প্রতাপাদিত্যের দেওয়ান বাড়ির পুজো, যাকে ঘিরে আজও মেতে ওঠেন স্থানীয়রা। প্রাচীন এই পুজোর রীতিনীতিও অনেকটাই আলাদা।

তখন দিল্লির মসনদে মুঘল সম্রাট আকবর। সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য তাঁর সেনারা দিকে দিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। অনেক ছোট ছোট রাজ্যের রাজা বাদশাহের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। কিন্তু মাথা নত করতে রাজি হলেন না যশোরের (‌এখন বাংলাদেশে)‌ স্বাধীন রাজা বারোভুঁইয়াদের অন্যতম প্রতাপাদিত্য। এই খবর শুনে চটে যান দিল্লির বাদশাহ। তলব করলেন সেনাপতি মান সিংহকে। আদেশ দিলেন, জীবিত বা মৃত যে ভাবেই হোক প্রতাপাদিত্যকে ধরতে হবে।

গুপ্তচর মারফত এই খবর পেয়ে চিন্তায় পড়েন প্রতাপাদিত্য। কারণ, যুদ্ধ শুরু হলে তাঁর নাবালক পুত্রের দায়িত্ব কে নেবে? রাজার এই চিন্তার কথা জানতে পেরে দেওয়ান দুর্গারাম চৌধুরী নাবালক রাজপুত্রের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান। এরই মধ্যে মান সিংহ বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে যশোর আক্রমণ করেন। দুর্গারাম রাজার ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যান বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার থানারপাড়া থানার ধোড়াদহ গ্রামে। তখন সেখানে চার দিকে জল আর ঘন জঙ্গল। তার মধ্যে নাবালক রাজকুমারকে নিয়ে লুকিয়ে দিন কাটাতে লাগলেন।

যুদ্ধ শেষ হয়েছে খবর পেয়ে দেওয়ান দুর্গারাম রাজাকে জানান যে, তাঁর ছেলে ভাল রয়েছে। ছেলের প্রাণ বাঁচানোর জন্য প্রতাপাদিত্য খুশি হয়ে দুর্গারামকে পাঁচটি মহাল দান করেন। পাঁচ মহলের একটি মহাল হল বর্তমান ধোড়াদহ। দেওয়ান থেকে জমিদার হয়ে দারুণ খুশি দুর্গারাম। জঙ্গলে আত্মগোপন করার সময় দেবী দুর্গার কাছে মানত করেছিলেন, ছেলেকে রক্ষা করে নিরাপদে যেন রাজার কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। কার্যসিদ্ধির পর ঘন জঙ্গল পরিষ্কার করে খড়ের চালাঘরে দুর্গাপুজো শুরু করেন দুর্গারাম। পরে ১৭৫৩ সালে পাকা দালান করে সেখানে জাঁকজমক করে দুর্গা পুজো শুরু হয়। রীতি মেনে সেই পুজো আজও চলে আসছে।

দুর্গারাম চৌধুরীর এক বংশধর পুষ্পেন চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা বাপ-ঠাকুর্দার কাছে শুনেছি, অতীতে পর্দানশীন যুগে চিকের আড়ালে বসে বাড়ির মেয়েরা দুর্গা মন্দিরের পুজো দেখতেন। সাবেকি একচালার প্রতিমায় পুজো হত। তখন মায়ের গায়ে থাকত সোনার গয়না। ১০০টি ঢাক বাজত, কামান দেগে শুরু হত সন্ধিপুজোর কাজ।’’

এলাকায় এই পুজো এখন 'বুড়িমার পুজো' নামে খ্যাত। এলাকার প্রবীণ শিল্পী দুলাল মালাকারের বংশধরেরা এখনও এই প্রতিমা তৈরি করেন। 'কালিকাপুরাণ' মতে এই পরিবার দেবীর পুজো করে। দেবীকে নানা রকম মাছের ভোগ দেওয়া হয়। এই পুজো মণ্ডপেই শালগ্রাম শিলা, মা মঙ্গলচণ্ডী ও বাণেশ্বরের পুজো হয়। মাছ ভোগ দেওয়ার সময় নারায়ণ শিলাকে বেদি থেকে নামিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। নবমীর দিনে শাক, ন’রকমের ভাজা-সহ নানা রকম মিষ্টি ভোগ দেওয়া হয়। দশমীতে কচুর শাক ও পান্তা ভাতের ভোগ দেওয়া হয়। পুরনো রীতি মেনে বুড়িমার বিসর্জনের পর এলাকার অন্য প্রতিমার বিসর্জন দেওয়া হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 durga Mughal Emperor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE