Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Durga Puja

কৃষ্ণচন্দ্রের স্বপ্ন আর প্রাচীন পুঁথির আখ্যান  

কৃষ্ণনগরের প্রাসাদে শুয়ে পালঙ্কে শুয়ে কৃষ্ণচন্দ্র এক দিন স্বপ্নে দেখলেন— স্বয়ং দুর্গা এসে বলছেন, “রানাঘাটের মুখোপাধ্যায় বাড়িতে গেলে তুই আমার দেখা পাবি।” রাজা এলেন, মৃন্ময়ী মূর্তির মধ্যে দেখলেন দুর্গার চিন্ময়ী রূপ।

চতুর্থীতেই পাটে ওঠে প্রতিমা। রানাঘাটের শর্মাবাড়িতে।

চতুর্থীতেই পাটে ওঠে প্রতিমা। রানাঘাটের শর্মাবাড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।

সুদেব দাস
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:৫৪
Share: Save:

নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজপাটের পরিধি তখন বহু দূর ছড়ানো।

কৃষ্ণনগরের প্রাসাদে শুয়ে পালঙ্কে শুয়ে কৃষ্ণচন্দ্র এক দিন স্বপ্নে দেখলেন— স্বয়ং দুর্গা এসে বলছেন, “রানাঘাটের মুখোপাধ্যায় বাড়িতে গেলে তুই আমার দেখা পাবি।” রাজা এলেন, মৃন্ময়ী মূর্তির মধ্যে দেখলেন দুর্গার চিন্ময়ী রূপ। তা দেখে আপ্লুত হয়ে মুখোপাধ্যায়দের ‘শর্মা চৌধুরী’ উপাধি দিয়ে গেলেন রাজা।

সেই থেকে রানাঘাটের সেই মুখোপাধ্যায় বাড়ি ‘শর্মাবাড়ি’ বলে পরিচিতি পেল। এবং সেই বাড়ির সদস্যদের মুখে-মুখেই বংশ পরম্পরায় চলে আসছে এই ‘কৃষ্ণচন্দ্রের আখ্যান’। যার লিখিত ইতিহাস কিছু নেই। পরিবারের সদস্য সৌরভ শর্মা চৌধুরী বড়দের মুখে শুনেছেন এই গল্প— “এক সময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর নবরত্ন সভায় বলেছিলেন, রাজবাড়িতে এত ধুমধাম করে পুজো হচ্ছে। অথচ মা যেন এখানে বিরাজমান নন। এর পরেই রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো দেখতে আসেন।”

শর্মাবাড়ির দাবি, ১২৬২ সালে মালদহের চাঁচল থেকে ব্রহ্মডাঙায় (বর্তমানে রানাঘাট শহরে) এসে রামকুমার চক্রবর্তী এই দুর্গাপুজোর পত্তন করেন। অর্থাৎ পুজোর বয়স এখন ৭৬২ বছর, যদিও তার কোনও লিখিত তথ্যপ্রমাণ নেই। পুজোর প্রচলন হয়েছিল ঘটে, প্রতিমা আসে অনেক পরে। চতুর্থীর দিন প্রতিমা পাটে ওঠে। ঘটনাচক্রে, আজ রবিবারই সেই দিন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, রামকুমার নিঃসন্তান ছিলেন। পরে তাঁর এক পালিত কন্যার দুই মেয়ে হয়। তাঁদেরই এক জন পরে বিবাহসূত্রে মুখোপাধ্যায় পদবি পান। সেই মেয়ের পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য শম্ভুনাথ শর্মা চৌধুরীর দাবি, “বাংলায় লেখা প্রাচীন তালপাতার পুঁথি মতে এই বাড়ির পুজো হয়ে আসছে। ওই পুঁথি অন্তত সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো হবে। মূল যে পুঁথি ছিল তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায়, তার অনুলিপি করেই এই পুঁথি লেখা হয়।” পুরাণ গবেষক শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রাচীন মূল পুঁথিটি থাকলে তা মধ্যযুগের বাংলা লিপির নিদর্শন হিসেবে গ্রাহ্য হতে পারত। সেটির তো দেখা মেলেনি। তবে পুজোর জন্য এখনও যে পুঁথিটি ব্যবহৃত হয়, সেটিও যথেষ্ট প্রাচীন।”

বাড়ির সদস্যেরা শুনেছেন, পুজোর প্রচলনের সময়ে ভিক্ষা করেই তার সংস্থান হত। সেই রীতি বজায় রাখতে আজও সামান্য ভিক্ষা করে পুজোর জোগাড় করা হয়। প্রথা মেনে নবমীতে হয় কাদা খেলা। কাছাকাছি যে সব বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়, সেই ঘোষবাড়ি, পালবাড়ি, কাঁসারিবাড়িতে গিয়ে শর্মাবাড়ির সদস্যেরা কাদা খেলে আসেন। দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন হয় পুরনো আমল থেকে চলে আসা নির্দিষ্ট পথ ধরেই।

নদিয়া জেলার অন্যতম প্রাচীন এই পুজোর প্রতিমাকে রানাঘাটের মানুষজন চেনেন ‘বুড়ো মা’ নামে। কোথা থেকে কেন এই নাম এল, তা অবশ্য শর্মাবাড়ির বর্তমান বাসিন্দাদের কারও জানা নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja Durga Puja 2024 Krishnachandra Roy Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy