সরপুরিয়া ও সরভাজা। নিজস্ব চিত্র
দাম শুনেই চমকে ওঠেন বছর ষাটেকের প্রসূন ভৌমিক। সরপুরিয়ার কেজি ছশো টাকা? নিজের মনেই গজগজ করছিলেন— “এত দাম বেড়ে গেলে নিজে খাব কী আর অন্যকে খাওয়াব কী?”
কিন্তু উপায় নেই। কলকাতা থেকে আত্মীয়েরা এসেছেন। বিজয়ার পর মিষ্টিমুখ করাতেই হবে। আর বাইরের লোকের কাছে কৃষ্ণনগরের মিষ্টি মানেই সরভাজা আর সরপুরিয়া। অগত্যা বেজার মুখে শপাঁচেক সরভাজা নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলেন প্রসূনবাবু। যাওয়ার আগে বলে যান— “সরপুরিয়া আর সরভাজা কিন্তু ক্রমশ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে!”
তাঁর অভিযোগ যে মিথ্যে নয় সে প্রমাণ মেলে বিজয়ার মিষ্টির প্লেটের দিকে তাকালেই। কয়েক বছর আগে কৃষ্ণনাগরিকেরা বিজয়ায় মিষ্টির প্লেটে সরভাজা বা সরপুরিয়ার বাদ দেওয়ার কথা ভাবতেই পারতেন না। কিন্তু দিন দিন তা কমতে শুরু করেছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এই দুই মিষ্টির দাম। বর্তমানে সাধারণ সরভাজার দাম ৫৮০ টাকা আর ‘স্পেশাল’ সরভাজার দাম ছ’শো টাকা প্রতি কেজি। একই অবস্থা সরপুরিয়ার ক্ষেত্রেও। সাধারণ সরপুরিয়ার দাম পাঁচশো টাকা আর ‘স্পেশালে’র দাম ছ’শো টাকা কেজি।
কৃষ্ণনগর শহরের স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, বরাবরই এই দুই মিষ্টির দাম বেশি। কিন্তু সেটা কখনও সাধারণের নাগালের বাইরে যায়নি। বছর সত্তরের স্বদেশ রায় বলছেন, “সরপুরিয়া আর সরভাজা বরাবরই দামি মিষ্টি বলে পরিচিত। কিন্তু তার পরেও কোনও বাড়িতে বিজয়া করতে গেলে প্লেটে কিন্তু এই দুই মিষ্টির কোনও একটা থাকতই। এখন সেটা কমতে শুরু করেছে।”
তিনি জানাচ্ছেন, উপায়ও নেই। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে এই দুই স্থানীয় মিষ্টি।
নগেন্দ্রনগরের বাসিন্দা নিরঞ্জন পাল যেমন বলছেন, “বরাবরই বিজয়াতে সরপুরিয়া আনা হত বাড়িতে। বিজয়া করতে এলে সকলকেই সেটা খেতে দেওয়া হত। এখন সেটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বার শুধু নিজেদের জন্যই নিয়ে আসা হয়েছে। যে হারে দাম বেড়েছে, তাতে এ ছাড়া কিছু করার নেই।”
তবে প্রায় সকলেই উৎসবের দিনে নিজেদের সাধ্যমতো সরভাজা, সরপুরিয়া কিনে নিয়ে যান বাড়ির প্রিয়জনেদের জন্য। পরিমাণে হয়তো কম, কিন্তু বিজয়ার স্বাদবদল হয়নি।
নদিয়া জেলা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সহ সভাপতি গৌতম দাস বলছেন, “এই দুই মিষ্টি বানাতে যে সব উপকরণ লাগে তার সবক’টার দাম বেড়ে গিয়েছে। ক’দিন আগেও ছোট এলাচের দাম ছিল দেড় হাজার টাকা কেজি। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে তিন হাজার টাকা। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কাজু, পেস্তা ছানা, দুধের দাম।” তিনি জানান, এই দুই মিষ্টির সঙ্গে কৃষ্ণনগরের সুনাম জড়িয়ে আছে। তাই মান ঠিক রাখতেই হবে। আর সেটা করতে গেলে দাম বাড়বেই।
তবে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন যে, দাম বাড়লেও বিক্রি কমেনি। শহরের সাধারণ মানুষ সে ভাবে সরভাজা, সরপুরিয়া না কিনলেও বাইরের খরিদ্দারের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী তাপস দাস বলেন, “বাইরের কেউ কৃষ্ণনগরে এলে ঘূর্ণীর মাটির পুতুল আর সরভাজা-সরপুরিয়ার খোঁজ করেনই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy