Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

অব্যবস্থায় নরকসম নিভৃতবাস

এমন অসংখ্য অভিযোগ প্রতিদিন আসছে নদিয়ার বিভিন্ন নিভৃতবাস কেন্দ্রগুলি থেকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০৫:৫৫
Share: Save:

কোথাও টানা তিন দিন কোনও সাফাই কর্মীকে দেখা যায়নি। শৌচাগার পরিষ্কার করা দূরের কথা, যে ঘরে ভিন রাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিক বা রোগীদের মেঝের উপর বিছানা পেতে থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই মেঝেতেও ঝাঁটও পড়েনি। তার উপর দিয়েই সকলে হেঁটে যাচ্ছেন। অত্যন্ত নোংরা, অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার ব্যবহার করছেন এক সঙ্গে বহু মানুষ। কোথাও আবার খাবারের পরিমাণ ও তার মান নিয়েও তীব্র ক্ষোভ রয়েছে আবাসিকদের মধ্যে। ছোট জায়গায় প্রায় ধাক্কাধাক্কি করে খাবার নিতে হচ্ছে অনেক জায়গায়।

এমন অসংখ্য অভিযোগ প্রতিদিন আসছে নদিয়ার বিভিন্ন নিভৃতবাস কেন্দ্রগুলি থেকে। জেলাশাসক বিভু গোয়েল অবশ্য এ ব্যাপারে মন্তব্য করেন, “মহকুমাশাসকেরা কোয়রান্টিন সেন্টারগুলি ঘুরে দেখা শুরু করেছেন। আশা করি এর পর আর কোনও সমস্যা থাকবে না।” কিন্তু এতে বেশির ভাগ আবাসিককেই সন্তুষ্ট করা যাচ্ছে না। তাঁদের মতে, একই জায়গায় এমন অনেককে রাখা হয়েছে যাঁদের মধ্যে কেউ-কেউ করোনা পজিটিভ আবার কেউ নেগেটিভ হতে পারেন। লালারস পরীক্ষার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত সেটা জানা যাবে না। তা হলে যত দিন না রিপোর্ট আসছে তত দিন তাঁদের এমন ভাবে রাখা দরকার যাতে যাঁরা আসলে পজিটিভ তাঁদের থেকে নেগেটিভদের মধ্যে রোগ সংক্রমণ না হয়। অভিযোগ, থাকা-খাওয়া-শোয়া-বাথরুম ব্যবহার কোনও ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। তাই কোয়রান্টিন কেন্দ্র থেকেও সংক্রমণের আশঙ্কা থাকছে। জেলায় এখন কোয়রান্টিন কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭টি। সেখানে মোট ৮৮০ জন থাকতে পারেন। এখন সব মিলিয়ে রয়েছেন ১৮৩ জন। প্রথম শুরু হয়েছিল কৃষ্ণনগরের কর্মতীর্থের কোয়রান্টিন কেন্দ্র। সেখানে খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়ে আবাসিকেরা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের আরও অভিযোগ ছিল কেন্দ্রের অপরিচ্ছন্নতা ও সামাজিক দূরত্ব রক্ষা না-হওয়াকে কেন্দ্র করে। একই অভিযোগ উঠেছিল তেহট্টের কোয়রান্টিন কেন্দ্রেও। সেখানেও পরিচ্ছন্নতার অভাব, একই শৌচাগার অনেকে ব্যবহার করা, ভিড় করে খাবার নেওয়া এবং দীর্ঘ ব্যবধানে খাবার দেওয়া নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন ভেলোর থেকে ফেরত আসা এক প্রৌঢ় ক্যানসার রোগী। একাধিক অভিযোগ উঠলেও পরিস্থিতি কোথাও তেমন বদলায়নি বলে অভিযোগ। ধুবুলিয়া থানার মায়াকোলের আইটিআই কলেজ কোয়রান্টিন কেন্দ্রের আবাসিক মহারাষ্ট্র-ফেরত বরকত আলি শেখ, মহিবুল শেখদের অভিযোগ, “আমরা বিক্ষোভ করার পর এখন খাবার অনেকটা ভাল হয়েছে। কিন্তু খবর পাচ্ছি, অন্য অনেক জায়গায় খাবার খুব খারাপ।” তাঁদের আরও অভিযোগ, ‘‘এখানে ৩০ জনকে রাখা হয়েছে। কিন্তু একটিমাত্র শৌচাগার। সেই শৌচাগার আবার পরিষ্কার হচ্ছে না। কোথাও রোগ প্রতিরোধের কোনও চেষ্টাই নেই!’’

অভিযোগ, একই অবস্থা কল্যাণীর নিভৃতবাস কেন্দ্রের। সেখানেও একটা বড় হলঘরে এক সঙ্গে ৩০ জনকে রাখা হয়েছে। সকলে এক সঙ্গে একটা শৌচাগার ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন সেখানেও। এবং সেখানেও শৌচাগার, ঘর পরিষ্কার রাখার কেউ নেই। মেনে চলা হচ্ছে না পারস্পরিক দূরত্ব। ওই কেন্দ্রেই রয়েছেন কালীগঞ্জের পলশুণ্ডা এলাকার বাসিন্দা সেরফুল শেখ। তিনি ফিরেছেন মহারাষ্ট্র থেকে। তাঁর কথায়, “যে ভাবে ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে হচ্ছে এবং একই নোংরা শৌচাগার ব্যবহার করতে হচ্ছে তাতে যে কোনও অবস্থায় রোগ সংক্রমণ হতে পারে।’’

আবার কৃষ্ণগঞ্জের কোয়রান্টিন সেন্টারে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার ও স্নানের জল সরবরাহ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। সেখানেও একটা ঘরে ৩১ জনকে রাখা হয়েছে। এখানে রয়েছেন মুম্বই থেকে ফেরা কালীগঞ্জের বড় চাঁদঘরের বাসিন্দা সহিদুল ইসলাম। তাঁর কথায়, “খাবারের পরিমাণ খুব কম। খাবার জল পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Quarantine Center Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy