Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Union Budget 2024

জ্বালানিতে জিএসটি নয়, ক্ষুব্ধ বণিকসভা

বণিকমহলের বক্তব্য, কর কাঠামোর অল্প-স্বল্প পরিবর্তন, মোবাইল জাতীয় কিছু জিনিসের দাম কমানো, সোনা-রুপোর আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া ছাড়া সেই অর্থে তেমন কিছুই নেই সাধারণ মানুষের জন্য।

নির্মলা সীতারামন।

নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৯
Share: Save:

রাজনৈতিক মহলের মতোই কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে একেবারেই খুশি নয় বণিকমহল। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ হওয়ার পর নদিয়া জেলার বিভিন্ন বণিকসভা থেকে শুরু করে এমএসএমই তথা ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, পরিবহণ, তাঁত, পাট প্রভৃতি বিভিন্ন ধারার ব্যবসায়ী মহল শুধু হতাশই নয়, সরাসরি একে বাংলা-বিরোধী বাজেট বলে মনে করা হচ্ছে।

বণিকমহলের বক্তব্য, কর কাঠামোর অল্প-স্বল্প পরিবর্তন, মোবাইল জাতীয় কিছু জিনিসের দাম কমানো, সোনা-রুপোর আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া ছাড়া সেই অর্থে তেমন কিছুই নেই সাধারণ মানুষের জন্য। কয়েক মাস আগে কয়েকশো রকমের ওষুধের দাম বাড়িয়ে এ দিন হাতে গোনা কয়েকটি ওষুধের দাম কমানোর মধ্যে কোনও কৃতিত্ব নেই। বরং তাঁদের কথায়, ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্প, তাঁতশিল্প, পর্যটন শিল্পের পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয় এমন কিছুই নেই এই বাজেটে। পশ্চিমবঙ্গের ফেডারেশন অফ ট্রেডার্স অর্গানাইজেশন বা এফটিও অনুমোদিত বণিকসভা নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স, ইড্রাস্ট্রি অ্যান্ড ট্রেডের সহ-সভাপতি উত্তম সাহা বলেন, “চার দিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আবহে ভেবেছিলাম, হয়তো কেন্দ্রীয় বাজেটে জ্বালানির উপরে জিএসটি বসানো হবে। প্রাক বাজেট চর্চায় তেমনটাই শোনা গিয়েছিল। আমরা সাগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু বাজেটে সেই বিষয় উঠলই না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আদৌ মাথাব্যথা নেই।”

সংগঠনের সম্পাদক সুবল দেবনাথের কথায়, “জ্বালানির উপরে জিএসটি না থাকায় দেশের এক এক রাজ্যে দাম এক এক রকম। ফলে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে পণ্য আমদানি রফতানিতে দামের অনেকটাই হেরফের হয়ে যায়। কিন্তু জিএসটি বসলে সারা দেশে একই দাম বহাল হয়ে আখেরে সাধারণ ক্রেতার সাশ্রয় হত।” জ্বালানিতে জিএসটি না বসায় হতাশ পরিবহণ ব্যবসায়ীরাও।

প্রসঙ্গত, এ দিন রাজ্যে ডিজ়েলের দাম ছিল ৯১.৭৬ টাকা। কিন্তু তেলঙ্গানায় ৯৫.৬৫ টাকা, তামিলনাড়ুতে ৯২.৩৪ টাকা, অন্ধ্রপ্রদেশে ৯৬.১৭ টাকা, বিহারে ৯২.৮৭ টাকা। অন্য দিকে, দিল্লিতে ৮৭.৬২ টাকা, গুজরাতে ৯০.৪২ টাকা, হরিয়ানায় ৮২.৪০ টাকা। তাই উত্তরপ্রদেশ থেকে ডাল, বেঙ্গালুরু থেকে ট্যোমাটো, গুজরাত থেকে সজনে ডাঁটা বা অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আনা মাছ বা ডিমের দামের সঙ্গে ক্রেতাদের উপরে জ্বালানির দামটাও চেপে বসে।

একই ভাবে নদিয়া জেলার অপর এক বণিকসভা নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়-এর অভিমত, নদিয়া জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করলে এই বাজেট দিশাহীন। সংগঠনের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “এই জেলার পাটশিল্প, তাঁতশিল্প, টেক্সটাইল-সহ অন্য ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রে বিশেষ কোনও সুযোগ-সুবিধা যেমন পাওয়া গেল না, তেমনই কৃষিক্ষেত্র ও নতুন কর্মসংস্থানেও সঠিক দিশা নেই। কর্পোরেট সংস্থাগুলির মাধ্যমে দেশে যে এক কোটি ইন্টার্নশিপের কথা বলা হয়েছে, আমাদের রাজ্যের ক্ষেত্রে তা অবাস্তব বলে মনে করছি। বাজেটে সার্বিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গের পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলা হলেও সড়ক, সেতু, বিদ্যুৎ ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হল না।” অথচ, বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশকে ঢেলে দেওয়া হল বাজেটে।

আয়করের নতুন কাঠামো নিয়েও খুশি নয় ব্যবসায়ী মহল। বিশেষ করে, বার্ষিক উপার্জন ১৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে শতকরা ৩০% হারে আয়করের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়ার বিরোধিতা করছে বণিকমহল। তাঁদের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ পর্যন্ত আর একটি স্তর বিন্যাস করে শতকরা ২৫% হারে আয়কর নেওয়া হলে ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি উপকৃত হত। সব মিলিয়ে এ বারের বাজেট জেলার ক্ষুদ্র, মাঝারি ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোগীদের কাছে দিশাহীন ঠেকেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Union Budget 2024 Nirmala Sitharaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE