কার্তিক মহারাজ। —ফাইল চিত্র ।
হামলা হতে পারে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের আশ্রমে! উদ্বেগ প্রকাশ করে কলকাতা হাই কোর্টে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করার কথা জানালেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বেলডাঙা শাখার অধ্যক্ষ কার্তিক মহারাজ (স্বামী প্রদীপ্তানন্দ)। তিনি জানিয়েছেন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বেলডাঙার আশ্রম ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে বলে সোমবার হুমকি পেয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, হামলা হতে পারে বলে কানাঘুষোও শুনেছেন। আর তাতেই আশ্রমের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, মঙ্গলবার আইনজীবী মারফত নিরাপত্তা চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন কার্তিক মহারাজ। তবে সেই আবেদন এখনও গৃহীত হয়েছে কি না জানা যায়নি। পাশাপাশি মহারাজ সাফ জানিয়েছেন, তিনি সন্ন্যাসী। ভয়-ডর কিছু নেই। আশ্রম, হাসপাতাল এবং আশ্রমিকদের কথা মাথায় রেখেই তাঁর এই পদক্ষেপ। পুরো বিষয়টি নিয়ে তিনি রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানিয়েছেন কার্তিক মহারাজ।
কার্তিক মহারাজ এবং ভারত সেবাশ্রম সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহের সূত্রপাত গত শনিবার। ওই দিন হুগলির গোঘাটে একটি নির্বাচনী জনসভায় কার্তিক মহারাজের নাম করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “সব সাধু সমান হয় না। সব স্বজন সমান হয় না। আমাদের মধ্যেও কি আমরা সবাই সমান? এই যে বহরমপুরের এক জন মহারাজ আছেন। আমি শুনেছি অনেক দিন ধরে, কার্তিক মহারাজ। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। আমার শ্রদ্ধার্ঘ্যের তালিকায় তারা দীর্ঘ দিন ধরে আছে। কিন্তু যে লোকটা বলে, তৃণমূলের এজেন্ট বসতে দেব না, সেই লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। তার কারণ, সে ‘ডাইরেক্ট পলিটিক্স’ করে দেশটার সর্বনাশ করছে।’’
এর পরেই বিষয়টি নিয়ে সরব হন মহারাজ। বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীকে আইনি চিঠিও পাঠিয়েছেন। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কোনও সারবত্তা নেই। ওই বক্তব্যে তাঁর ‘মানহানি’ হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন কার্তিক মহারাজ। সম্মানহানির চেষ্টায় মুখ্যমন্ত্রী ‘অসত্য’ এবং ‘বিভ্রান্তিকর’ মন্তব্য করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের ওই সন্ন্যাসী। আইনি চিঠিতে আগামী চার দিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁর বক্তব্যের জন্য জবাব চাওয়া হয়েছে। চার দিনের মধ্যে জবাব না দিলে কার্তিক মহারাজ আইনি পদক্ষেপ করবেন বলেও জানানো হয় ওই চিঠিতে।
নির্বাচনী আবহে সেই ‘ইস্যু’ হাতছাড়া করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল। মুখ্যমন্ত্রীর সাধু-সন্ত মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মমতার দিকে একের পর এক নিশানা করেছেন মোদী।
এই নিয়ে বিতর্কের আবহেই রবিবার জলপাইগুড়ি রামকৃষ্ণ মিশনে (আদতে শিলিগুড়ির সেবক রোড) হামলার অভিযোগ ওঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমে সেই হামলা চালানো হয়েছে তৃণমূলের মদতে। রামকৃষ্ণ মিশনে হামলার সেই ঘটনা তাঁর কানেও এসেছে বলে জানিয়েছেন কার্তিক মহারাজ। তাঁর দাবি, মুর্শিদাবাদের ভারত সেবাশ্রমে হামলা চালানো হতে পারে বলেও তিনি সূত্র মারফত খবর পেয়েছেন।
তার পরেই নিরাপত্তা চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কার্তিক মহারাজ। মহারাজের কথায়, ‘‘সোমবার দু’জন এসে হুমকি দিয়ে গিয়েছে যে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের এই আশ্রম ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। আমি নিজের জন্য নিরাপত্তা চাইনি। আমাদের যে দু’টি আনন্দলোক হাসপাতাল রয়েছে, আমাদের বিদ্যালয়ে যে আশ্রমিক পড়ুয়ারা রয়েছে, তাদের যাঁরা শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন, সকলের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আমার এই আবেদন।’’ একই সঙ্গে মহারাজ বলেন, ‘‘শুনেছি রামকৃষ্ণ মিশনে হামলা হয়েছে। এ দিক থেকেও কানাঘুষো শুনছি। তাই নিরাপত্তার অভাব খানিকটা বোধ করছি। আইনজীবী মারফত আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশ সুপারের সঙ্গেও কথা বলেছি। রাজ্য পুলিশের শীর্ষ স্তরেও কথা বলেছি।’’
তা হলে কি পুরো বিষয়টি নিয়ে ভয় পাচ্ছেন কার্তিক মহারাজ? জবাবে ওই সন্ন্যাসী বলেন, ‘‘আমি সন্ন্যাসী মানুষ। আমার ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিয়ে আমি চিন্তিত। গোটা বিষয়টির উপর নজর রাখছি। দেখা যাক কী হয়।’’
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, ইস্কনের মতো সংগঠনগুলির প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু উনি (কার্তিক মহারাজ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্য. নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন এবং বলছেন। এতে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy