জঙ্গিপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চলছে পুলিশি টহলদারি। বুধবার সকাল থেকে থমথমে এলাকা। বন্ধ আন্তর্জাল পরিষেবা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ১৬৩ ধারা জারি থাকবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। বস্তুত, সংশোধিত ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের উপদ্রুত এলাকায় দ্রুত শান্তি ফেরাতে তৎপরতা তুঙ্গে। পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। ১২ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল এখন স্বাভাবিক।
ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। আগামী ১২ এপ্রিল এ নিয়ে মামলার শুনানি রয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। বিভিন্ন জায়গায় সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে জঙ্গিপুরে সংখ্যালঘু ছাত্র ও যুব সংগঠনের ডাকে আন্দোলন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। জঙ্গিপুরের ওমরপুর মোড় থেকে ধুলিয়ান বাজার পর্যন্ত একাধিক জায়গায় জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে সংখ্যালঘু ছাত্র সংগঠন। ইসলামিক সংগঠনের কয়েক হাজার ছাত্র-যুব সেই বিক্ষোভে শামিল হন। অবরুদ্ধ হয় ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক। স্তব্ধ হয়ে পড়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সড়কপথে যোগাযোগ। অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। অভিযোগ, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠি চালায় পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল। সংঘর্ষে দুই পক্ষেরই বেশ কয়েক জন আহত হন।
ওই অশান্তির পরিপ্রেক্ষিতে ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের যাওয়ার কথা ছিল জঙ্গিপুরে। তবে সকালে তিনি জানিয়েছেন, ১৬৩ ধারা জারি রয়েছে এলাকায়। তাঁর উপস্থিতিতে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে, এই বিষয়টি মাথায় রেখে আপাতত তিনি জঙ্গিপুর যাচ্ছেন না। অন্য দিকে, জঙ্গিপুরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ, পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। একটি বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, হিংসা বরদাস্ত করা উচিত নয়। তিনি রাজ্য প্রশাসনের ভূয়সী প্রশংসা করে জানান, রাজ্যে শান্তিপূর্ণ ভাবে রামনবমী পালিত হয়েছে। এখান থেকে বোঝা গিয়েছে যে, প্রশাসন কোনও রকম হিংসা নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। তাই শান্তি বিঘ্নিত করার যে কোনও চেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা উচিত।
আরও পড়ুন:
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া, যাঁরা গুজব ছড়িয়েছেন বা চেষ্টা করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুজবে কান না দিয়ে সকলকে শান্ত থাকার জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচ বা তার অধিক মানুষ একসঙ্গে জমায়েত করতে পারবেন না। কোনও দাহ্য পদার্থ, পেট্রল, ডিজ়েল, কেরোসিন জাতীয় পদার্থ বহন করা যাবে না। হাতে লাঠি নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোরা যাবে না। কোনও প্ররোচনামূলক বক্তব্য রাখা বা গুজব ছড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন বলেন, ‘‘আন্দোলনের নামে গুন্ডামি বরদাস্ত নয়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন যদি কেউ করে অবশ্যই সমর্থন থাকবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশনের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। পুলিশের উপর আক্রমণকে সমর্থন করি না।’’
- সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের আবহে গত শুক্রবার অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, সুতি, শমসেরগঞ্জ-সহ কিছু অঞ্চলে।
- মুর্শিদাবাদের অশান্তির ঘটনার তদন্তে বুধবার ২০ সদস্যের সিট গঠন করে রাজ্য পুলিশ।
-
পর্যাপ্ত পুলিশ থাকলে নিয়ন্ত্রণে আনা যেত মুর্শিদাবাদের অশান্তি, নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে রাজ্য? প্রশ্ন হাই কোর্টের
-
মুর্শিদাবাদের জোড়া খুনে সিবিআই তদন্তের আর্জি শুনল না ডিভিশন বেঞ্চও! ফেরত গেল সিঙ্গল বেঞ্চে
-
মানবাধিকার কমিশনের সামনে নয়, মুর্শিদাবাদের অশান্তির প্রতিবাদে ধর্নার জায়গা বদল করল হাই কোর্ট
-
মুর্শিদাবাদের জোড়া খুনে সিবিআই তদন্তের আবেদন শুনল না সিঙ্গল বেঞ্চ! পাঠানো হল প্রধান বিচারপতির কাছে
-
‘অ্যাক্টিং প্রাইম মিনিস্টার’কে বলব, অশান্তি না-বাধিয়ে সীমান্তে নজর দিন, মমতার নিশানা কি শাহের দিকে?