Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

আমপান-ক্ষতির টাকা হাতানোয় পুলিশে নালিশ

নোটিস পাওয়ার পরে অনেকেই টাকা ফেরত দিতে শুরু করেন। আবার কেউ কেউ দ্বিতীয় বার নোটিস পেয়েও টাকা ফেরত দেননি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৩২
Share
Save

মিথ্যে তথ্য দিয়ে আমপানে ক্ষতিপূরণের টাকা হাতানোর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে শুরু করছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে নদিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় ১২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জেলা প্রাশসন সূত্রের খবর।

গত বছর ২০ মে আমপান ঝড়ে ভেঙে পড়েছিল হাজার হাজার ঘর। কারও আং‌শিক ক্ষতি হয়েছিল, আবার কারও ঘর পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিল। ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে প্রায় প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে উঠেছিল অনিয়ম, স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ। অভিযোগ ছিল, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, তাঁদের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।

পরে এই দুর্নীতি সামনে চলে আসায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। নতুন করে শুরু হয় তদন্ত। অনেকেই স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের চাপে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন। কিন্তু সকলে সে পথে হাঁটেননি। প্রশাসনের নোটিস পেয়েও অনেকে টাকা ফেরত দেননি। ফ্রিজ় করে দেওয়া হয় তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। তার পরেও অনেকে টাকা ফেরত না দেওয়ায় প্রাশাসনের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, প্রথম অবস্থায় নোটিস পাওয়ার পরেও টাকা ফেরত না দিলেও প্রশাসনের তরফে পুলিশের কাছে এফআইআর করার পর কেউ কেউ টাকা ফেরত দেওয়া শুরু করেছেন। আমপান ঝড়ে যাঁদের ঘরের সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের ২০ হাজার ও যাঁদের আংশিক ক্ষতি হয়েছে তাঁদের ৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে সরকার। অভিযোগ, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় যাঁদের নাম আছে তাঁদের বড় অংশের কোনও ক্ষতিই হয় নি। তৃণমূল ও বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান ও সদস্যদের নাম রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। রয়েছে তাঁদের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-পরিজনের নাম। নাম রয়েছে মূলত এই দুই দলেরই নেতাকর্মীদের।

বিষয়টি সামনে আসার পর নানা জায়গায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ হয়। অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা সরাসরি পঞ্চায়েত প্রধান বা উপপ্রধানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে শুরু করেন প্রশাসনের কাছে। এরই মধ্যে রাজ্যের নির্দেশে তালিকা খতিয়ে দেখতে শুরু করে প্রশাসন। পাশাপাশি সত্যিই ক্ষতি হয়েছে অথচ তালিকায় নেই এমন ব্যক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত করা হতে থাকে। সব মিলিয়ে প্রায় ৬৫ হাজার আবেদন জমা পড়ে। প্রশাসন খতিয়ে দেখে জানতে পারে, একটা বিরাট সংখ্যক আবেদন পুরোপুরি মিথ্যা। সেই সংখ্যাটা প্রায় ২৩ হাজার। এর পর প্রায় ৪২ হাজার পরিবারের অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

এর পরেও দেখা যায়, এমন বহু ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে যাদের আদৌ ক্ষতি হয়নি। আবার তাদের চিহ্নিত করে টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। তারা যাতে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে নিতে না পারে তার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ় করে দেওয়া হয়। প্রশাসনের তরফে নোটিস পাঠানো হয় টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, তেমন লোকের সংখ্যা সাড়ে চারশোরও বেশি।

নোটিস পাওয়ার পরে অনেকেই টাকা ফেরত দিতে শুরু করেন। আবার কেউ কেউ দ্বিতীয় বার নোটিস পেয়েও টাকা ফেরত দেননি। সেই সংখ্যাটা বর্তমানে প্রায় ১২০ জন। প্রায় সবটাই সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণের টাকা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গ্রহীতারা মূলত নাকাশিপাড়া ব্লক, কৃষ্ণনগর ১ ও ২ ব্লক, তেহট্ট ২ ব্লক ও রানাঘাট ২ ব্লকের বাসিন্দা। এই সব ব্লক কর্তৃপক্ষই মূলত সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। নাকাশিপাড়া ব্লকে যেমন আছেন ২২ জন, টাকা ফেরত দিয়েছেন ৫ জন। অনেকেই অবশ্য এখনও দাবি করছেন যে ঝড়ে তাঁদের ঘর সত্যিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীর স্বামী, বেথুয়াডহরি ১ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সুশান্ত সরকার দাবি করেন, “আমার বাড়ির ক্ষতি হয়েছিল বলেই আবেদন করেছিলাম। ক্ষতিপূরণের টাকা খরচ করে ঘর ঠিক করেছি। ওই টাকা ফেরত দেওয়া মতো সামর্থ্য আমার নেই। সেটা আমি ব্লক অফিসে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র মতে, “প্রশাসন অভিযোগ করেই দায় সেরেছে। শাস্তি হচ্ছে কোথায়? সংযুক্ত মোর্চা ক্ষমতায় এলে এদের সবাইকে জেলে ঢোকাব।” বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদারের দাবি, “আমাদের দলের যে সামান্য ক’জন ভুল করে টাকা নিয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই ফেরত দিয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় এলে আমপান দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের জেলের ভাত খাওয়াব।” আর তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র দেবাশিস রায় বলছেন, “প্রশাসন থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করাই বলে দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেন না। যারা আমপান দুর্ণীতির সঙ্গে জড়িত, সরকারে ফিরে আসার পর তাদের সকলকেই শান্তি দেওয়া হবে।” জেলা শাসক পার্থ ঘোষ বলেন, “যাঁরা টাকা ফেরত দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এঁরা শাস্তি পাবেন।”

Cyclone Amphan

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।