৬০ দিনের মাথায় সাক্ষী সাবুদ গ্রহণ করে দোষী সাব্যস্ত করা হল অভিযুক্তদের। —প্রতীকী চিত্র।
নাবালিকাকে গণধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় দুই যুবককে জঙ্গিপুর আদালত দোষী সাব্যস্ত করল বৃহস্পতিবার। ফরাক্কা থানার পুলিশ এই ঘটনায় দু’জনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দিয়েছিল ৪ নভেম্বর, ঘটনার ২১ দিনের মাথায়। ৬০ দিনের মাথায় সাক্ষী সাবুদ গ্রহণ করে দোষী সাব্যস্ত করা হল অভিযুক্তদের। আজ, শুক্রবার সাজা ঘোষণা হবে বলে আদালত সূত্রের খবর। এ দিন আদালতে বেশ ভিড় ছিল।
ফরাক্কায় ১২ অক্টোবর সকালে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলার সময় ফুল দেওয়ার নাম করে ওই নাবালিকাকে ডাকে প্রধান অভিযুক্ত। তাকে নিয়ে যায় মাঠের পাশেই অভিযুক্তের বাড়িতে। তারপর থেকেই ওই নাবালিকার খোঁজ মিলছিল না। দুপুর নাগাদ খোঁজাখুঁজি শুরু করে তার পরিবারের লোকজন। প্রতিবেশীরা তিন তিন বার দীনবন্ধুর বাড়িতে তল্লাশি চালায়। শেষ পর্যন্ত তার বস্তাবন্দি দেহ মেলে একটি ঘরের আলনার কাছ থেকে।দেখা যায়, বস্তার ভিতরে মুখে একটি কাপড় চাপা অবস্থায় রয়েছে নাবালিকার দেহ। এরপরই প্রতিবেশীরা গণধোলাই দিতে শুরু করলে ফরাক্কা থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সে দিনই মাঝ রাতে (১৩ অক্টোবর) ফরাক্কা থানা মৃতা নাবালিকার বাবার অভিযোগে অপহরণ, গণধর্ষণের পকসো আইন, খুন, প্রমাণ লোপাট ইত্যাদি ধারায় এফআইআর রুজু করে।
তখন আর জি করের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে রাজ্য জুড়ে। তার মধ্যেই এই ঘটনায় প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে ফরাক্কা। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। পুলিশ হেফাজতে অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে শুধু সে-ই নয়, এলাকারই এক টোটো চালকও এই ঘটনায় জড়িত। ওই নাবালিকাকে দু’জনে মিলে গণধর্ষণ করেই খুন করেছে। তদন্ত শেষ করে ২১ দিনের মাথায় পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে আদালতে।
এ দিন জঙ্গিপুর আদালতে জেলার পুলিশ সুপার আনন্দ রায় সহ হাজির ছিলেন জেলা পুলিশ ও ফরাক্কা থানার পুলিশের একাধিক অফিসার।অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের ভিড়ও ছিল উপচে পড়া। বিকেল ৪টে নাগাদ বিচারক এজলাসে নামার কিছু ক্ষণ আগেই নিয়ে আসা হয় দুই অভিযুক্তকে। বিচারক তাদের উভয়কেই বিএনএস ৬৬, ৬৫, ১৩৭, ১৪০, ১০৩ ও ৬ পকসো ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন। এক অভিযুক্তকে শুধু অপহরণের ধারা থেকে অব্যাহতি দেন। এই মামলায় ফরাক্কা থানার পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ সুপার নিজেও একাধিক বার ঘটনাস্থল ঘুরে তদন্তের তদারকি চালিয়েছেন।
পুলিশ সুপার আনন্দ রায় বলেন, “যে যে ধারায় পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছিল তার সব ক’টি ধারাতেই অভিযুক্তরা অপরাধী প্রমাণিত হয়েছেন আদালতে।”
এই মামলায় সরকারের পক্ষে ছিলেন বিশেষ আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এক অভিযুক্ত যখন ফুল দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তাকে তার বাড়িতে আনে তখন প্রতিবেশী এক মহিলা তা দেখে ফেলেন। পরে তার বাড়িতে আসে দ্বিতীয় অভিযুক্ত। ময়না তদন্তে প্রমাণ হয়েছে মুখ ও গলা টিপে নাবালিকাকে খুন করা হয়। মৃত্যুর পরও ধর্ষণ করা হয় আবার তাকে। এরপর একটি প্লাস্টিকের হলুদ বস্তায় ভরে দেহটিকে আলনার নীচে রেখে দেয়। ঘটনার পর বাড়ির কলপাড়ে সিগারেটের মধ্যে গাঁজা পুরে তা খায়। এটাতেও তাদের অপরাধী চিহ্নিত করতে সহজ হয়েছে। কারণ সিগারেটের ডিএনএ পরীক্ষায় এক অভিযুক্তের ডিএনএ মিলে যায়।
তিনি জানান, এই মামলায় এক সাহসী প্রসূতি মহিলার জবানবন্দি খুব কাজে দিয়েছে। একাধিক জায়গায় পাওয়া সামগ্রীতে রক্ত মেলে যাতে অভিযুক্ত ও মৃতার ডিএনএ মিলেছে। রাজ্যে এই প্রথম এই মামলায় ড্রোন ম্যাপিং করা হয়। ফলে সমগ্র ঘটনা সামনে আসে। যে সব ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে তাতে ফাঁসির সাজা সর্বোচ্চ।
তবে এক অভিযুক্তের হয়ে আইনজীবী সাক্ষীগোপাল চট্টোপাধ্যায় মামলা লড়লেও আর এক অভিযুক্তের হয়ে মামলা লড়েন লিগাল সেলের আইনজীবী মহম্মদ হাবিবুর খান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy