তাঁর হারিয়ে ফেলা মোবাইলের সিমকার্ড যে এক বাংলাদেশির হাতে চলে গিয়েছে, তা তিনি জানতে পেরেছিলেন। যদিও সে যে কে, তা তিনি জানতেন না। কিন্তু এ সব বিষয়ে অজ্ঞানতাবশত পুলিশকে কিছু জানাননি। বলিউড অভিনেতা সেফ আলি খানের উপরে হামলার তদন্তে আসা মহারাষ্ট্র পুলিশকে এমনটাই জানালেন নদিয়ার কোতোয়ালি থানার বাসিন্দা খুকুমণি শেখ।
সোমবার কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেন, “মহারাষ্ট্র পুলিশকে খুকুমণি জানিয়েছেন, তিনি কলকাতায় ফোন হারিয়ে ফেলেছিলেন। তার পর থেকে অন্য কেউ সিমটা ব্যবহার করছিল।” পুলিশ সূত্রের দাবি, খুকুমণির কথা বিশ্বাসযোগ্য বলেই আপাত ভাবে তদন্তকারীদের মনে হয়েছে। এ দিনই তাঁরা ফিরে গিয়েছেন।
সম্প্রতি মুম্বইয়ে নিজের বাড়ির ভিতরেই আক্রান্ত হন চিত্রতারকা সেফ। সেই হামলায় জড়িত দাবি করে শরিফুল ইসলাম শেহজ়াদ নামে এক এক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করেছে মুম্বই পুলিশ। যদিও সিসি ক্যামেরার ফুটেজে যে হামলাকারীর ছবি দেখা গিয়েছিল, তার সঙ্গে শরিফুলের মিল নেই বলে নানা মহল থেকেই দাবি করা হয়েছে।
তবে শরিফুলের মোবাইলে যে সিমকার্ড ছিল তাতে নদিয়ার কোতোয়ালি থানা নয়, চাপড়া থানার ঠিকানা ছিল। তদন্তে নেমে মুম্বই পুলিশ দেখে, ওই সিমকার্ড চাপড়ার বড় আন্দুলিয়া এলাকার বাসিন্দা খুকুমণি শেখের নামে তোলা। তাঁর বাবার নাম জাহাঙ্গির শেখ। সেই সূত্র ধরেই রবিবার রাতে তারা চাপড়ায় আসে। প্রথমে জাহাঙ্গিরের সন্ধান মেলেনি। যে দোকান থেকে সিমকার্ডটি কেনা হয়েছিল বলে তথ্য মিলেছে সেটির মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি বছর চারেক আগে মোবাইলের দোকান বন্ধ করে কাঠের ব্যবসা করছেন। অথচ, সিমটি চালুই করা হয়েছে ২০২৪ সালে। অর্থাৎ, গোটা বিষয়টিই ‘ভুয়ো’।
এর পরে চাপড়া থানার সহযোগিতায় মহারাষ্ট্র পুলিশ খুকুমণির বাবা জাহাঙ্গিরের বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। সেখানে গিয়ে জানা যায়, মধ্য ত্রিশের খুকুমণি থাকেন কোতোয়ালি থানার ঝিটকেপোতা এলাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। বছর চারেক আগে হৃদরোগে তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। এ দিন দুপুরে কোতোয়ালি থানার সাহায্য নিয়ে সেখানে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পরে খুকুমণি বলেন, “বছরখানেক আগে আমার দিদি কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আমি দিদির কাছে ছিলাম। আমার নিজের ফোন ছিল না। বাড়ি থেকে একটা পুরনো ফোন আমাকে দেওয়া হয়। এনআরএসের পাশে একটি দোকান থেকে আমি সিমকার্ড কিনেছিলাম। দু’দিন পরে আমার ফোনটা হারিয়ে যায়।” যদিও এ ব্যাপারে কী করণীয় তা না জানায় স্থানীয় থানায় ডায়েরি করেননি বা ‘সার্ভিস প্রোভাইডার’ সংস্থায় ফোন করে সিমকার্ড ‘ব্লক’ করাননি বলে
তাঁর দাবি।
তবে খুকুমণি হারিয়ে ফেলা ফোনের আশা ছাড়েননি। পরে তিনি ওই নম্বরে ফোন করেন। খুকুমণির কথায়, “এক জন ফোন ধরলে, সেটা ফেরত চাই। লোকটা বাংলাতেই জানায়, যে সে মুম্বইয়ে আছে। আমি বলি যে এখানে তার বাড়ির কারও কাছে পাঠিয়ে দিলে, আমি নিয়ে নিতে পারব। তখন লোকটা বলে ‘সেটা সম্ভব নয়’, তার বাড়ি বাংলাদেশে। তার পরে সে লাইন কেটে দেয়। আর ফোন করা হয়নি।” কলকাতায় যে দোকান থেকে তিনি সিমকার্ড কিনেছিলেন, কেউ চাইলে সেটি তিনি দেখিয়ে দিতে পারবেন বলেও খুকুমণি
দাবি করেছেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)