Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
High Madrasah Examination

লকডাউনে ঘরে ফেরা বছর চল্লিশের পরিযায়ী শ্রমিক তাহাবুল সস্ত্রীক হাইমাদ্রাসার পরীক্ষার্থী

২০২০ সালের শুরুতে কোভিড অতিমারিতে টালমাটাল গোটা বিশ্ব। লকডাউনের ধাক্কায় বেসামাল জনজীবন। সেই ধাক্কার ঢেউ লাগল তাহাবুলের জীবনেও। মুম্বইয়ের পাঠ চুকিয়ে ফিরে এলেন বাড়িতে।

An image of Couple

আসমা ও তাহাবুল। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
হরিহরপাড়া (মুর্শিদাবাদ) শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০২:০৫
Share: Save:

সংসারের সকলের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার তাগিদে যখন বাড়ি ছেড়েছিলেন, তখন তিনি সদ্য কৈশোর ছুঁয়েছেন। ২০০৭ সাল। হাইমাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষার ফল তখনও বেরোয়নি। পড়াশোনা ফেলে কাজের সন্ধানে ট্রেনে চেপে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন রেজিনগরের বাসিন্দা তাহাবুল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র (এসি)-এর কাজ করে মাস ফুরোলে পেতেন ১৮০০ টাকা। পথেঘাটেই তাহাবুল সাবালক থেকে তরুণ হলেন। বাড়ি ফিরে পরিচিত আসমাকে বিয়ে করলেন। তার পর ভিন্‌রাজ্যে পাড়ি দিলেন যুগল। তখন বেতন ১৮০০ থেকে পাঁচ হাজার ছুঁয়েছে!

এর পর কেটে গিয়েছে প্রায় ১৩ বছর। ২০২০ সালের শুরুতে কোভিড অতিমারিতে টালমাটাল গোটা বিশ্ব। লকডাউনের ধাক্কায় বেসামাল জনজীবন। সেই ধাক্কার ঢেউ লাগল তাহাবুলের জীবনেও। মুম্বইয়ের পাঠ চুকিয়ে ফিরে এলেন বাড়িতে। এর মধ্যে তাঁর দুই ছেলেও স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কোথাও মাটি কাটা কিংবা অন্যের জমিতে চাষ করার ফাঁকে নিজের এক টুকরো জমিতে কাজ করে কাটছিল দিন। সেই সময় তাহাবুলের ইচ্ছা জাগল আবার পড়াশোনা করার। তকিপুর হাইমাদ্রাসায় গিয়ে ইচ্ছার কথা জানালেন তাহাবুল। নথি ঘেঁটে স্কুলের শিক্ষকেরা জানিয়ে দিলেন, ৪০ ছুঁইছুঁই তাহাবুলের মাদ্রাসা পরীক্ষায় বসতে কোনও বাধা নেই। আর কিছু ভাবলেন না। বাড়ি ফিরে আসমাকে জানালেন। তাঁকেও ফের পড়াশোনার জীবনে ফিরতে উৎসাহ দিলেন।

জুটিতে ভর্তি হলেন। এ বার যুগলেই হাইমাদ্রাসার সিনিয়র পরীক্ষার্থী। বুধবার হাসতে হাসতে তাহাবুল বলেন, “কম লেখাপড়া জানতাম বলে বিদেশ বিভুঁইয়ে পদে পদে হোঁচট খেতে হয়েছে। মনে হয়েছে জীবনের অঙ্কের সঙ্গে পাঠ্য বইয়ের অঙ্কের সরাসরি যোগ হয়তো নেই। তবু অঙ্ক কষেই পা ফেলতে হয়। তাই আবার ফিরে এলাম স্কুলে।”

আসমা বলেন, “আমাদেরএক ছেলে ষষ্ঠ আর অন্য জন সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। ওদের পড়াশোনায় যদি ভুল ধরিয়ে দিতে পারি তা হলে মা হিসাবে তার থেকে গর্বের আর কী আছে? তাই ফের বইয়ের পাতা ওল্টাতে এলাম তাহাবুলের ভরসায়।”

তাহাবুল ও আসমা পরীক্ষায় পাশ করবার বিষয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। লেখাপড়া নিয়ে আরও একটু এগোনোর ইচ্ছা রয়েছে আসমার। তিনি বলেন “পরিকল্পনা করে কি জীবন এগোয়? সময়ের উপরেই রয়েছে জীবনের ভার। ইচ্ছা থাকলে উপায়ও ঠিক মিলবেই। দেখা যাক।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE