প্রশাসনিক সূত্রে খবর, শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, নদিয়া, মালদহ, উত্তর ২৪ পরগনার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রচুর জাল নোট ছড়িয়ে পড়েছে। নিজস্ব চিত্র।
বেলডাঙার হাটে এক জোড়া বলদ গরু বিক্রি করে নগদে ৭০ হাজার টাকা মিলেছিল। বার তিনেক গুনে ওই টাকা লুঙ্গির ভাঁজে সযত্নে রেখে বাড়ি ফিরেছিলেন মুর্শিদাবাদের বেগুনবাড়ির রহিম মণ্ডল। পর দিন বড়ুয়া বাজারে মেয়ের বিয়ের জন্য কেনা গয়নার দাম সেই টাকা দিয়ে মেটাতে গিয়েই বাধল বিপত্তি। ১০টি ২ হাজার টাকার নোট হাতে নিয়েই দোকানদার জানালেন, ৮টি নোটই জাল! এ কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন রহিম। আইনি ঝামেলায় পড়তে হতে পারে ভেবে পরে প্রশাসনেরও দ্বারস্থ হননি তিনি। এ কোনও ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। রহিমের মতো একই ঘটনার শিকার নিমতিতার বাসিন্দা রামচরণ বিশ্বাসও। পেঁয়াজ বিক্রি করে ২ হাজার টাকার নোটে দাম পেয়েছিলেন তাহাজুদ্দিন। সেই টাকা দিয়ে ধুলিয়ানের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে স্ত্রীর চিকিৎসার বিল মেটাতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, সব ক’টি নোটই জাল!
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, নদিয়া, মালদহ, উত্তর ২৪ পরগনার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রচুর জাল নোট ছড়িয়ে পড়েছে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের পর অবৈধ হয়ে যাচ্ছে ২ হাজার টাকার নোট। তার আগে মজুত থাকা ২ হাজার টাকার নোট বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পাচারকারীদের জন্য ‘ধামাকা অফার’-ও নিয়ে এসেছে জাল নোট প্রস্তুতকারীরা! প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, এক মাস আগেও যেখানে ২ হাজার টাকার জাল নোটে ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পাচারকারীরা যা পেতেন, এখন লাভের অঙ্ক দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। যার জেরে তাঁদের আগ্রহও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাড়তি সতর্ক পুলিশ প্রশাসন। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার ভিজি সতীশ বলেন, ‘‘জাল নোট পাচার আটকাতে জেলা পুলিশ যথেষ্ট তৎপর। নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। একটি অভিযানে জাল নোট-সহ বেশ কয়েক জন পাচারকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে জেলা পুলিশ।’’ রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার কে কন্নন বলেন, ‘‘বিএসএফের (সীমান্ত রক্ষী বাহিনী) সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জাল নোট পাচারকারীদের ব্যাপারে জেলা পুলিশ সতর্ক।’’
সতর্ক বিএসএফের গোয়েন্দা বিভাগও। গোয়েন্দাদের সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদের সমশেরগঞ্জ, সুতি, ফরাক্কা, রানিনগর, মালদহের কালিয়াচক, নদিয়ার করিমপুর, চাপড়া, রানাঘাট এবং উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ ও স্বরূপনগর এলাকা দিয়ে ২ হাজার টাকার জাল নোট দেশের বাজারে পাচারের চেষ্টা চালাচ্ছে আন্তর্জাতিক জাল নোট পাচারচক্রের পাণ্ডারা। এর জন্য বিশেষ ‘অফার’ দিয়ে দেশের পাচারকারীদের জন মুনাফার অঙ্ক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ১ লক্ষ টাকার জাল নোট দেশের বাজারে চালাতে পারলে আগে মুনাফা হিসাবে পাচারকারীদের পকেটে ৩০-৪০ হাজার টাকা ঢুকত। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭০-৮০ হাজার টাকা। এক বিএসএফ আধিকারিক বলেন, ‘‘বাংলাদেশের দেশের নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, কুষ্টিয়া এই জাল নোট পাচারের অন্যতম ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের তৈরি হওয়া জাল নোটগুলি মূলত এই তিন জেলায় মজুত রাখা হয়েছে। সেগুলিই এ বার পাচারকারীদের লোভনীয় অফার দিয়ে অগস্ট মাসের মধ্যে ভারতের বাজারে ঢোকানোর চেষ্টা চলছে।’’
কিন্তু কী ভাবে দেশের বাজারে ছড়ানো হচ্ছে জাল নোট? গোয়েন্দাদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ার গরুর হাটকে বেছে নিচ্ছেন পাচারকারীরা। গরুর হাটে কয়েক ঘণ্টায় মধ্যে কয়েক লক্ষ টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। জাল নোট পাচারের জন্য এই প্রবণতাকেই কাজে লাগানো হচ্ছে। গরু বিক্রি টাকা মেটানোর সময় ব্যবহার করা হচ্ছে সেই সব জাল নোট! সময়ের অভাবের কারণে সেই মুহূর্তে জাল নোট চিনতেও পারছেন না গরু বিক্রেতারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই সীমান্তবর্তী থানাগুলিকে সতর্ক করেছে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। বাড়ানো হয়েছে নাকা চেকিং। গরুর হাটেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (জনসংযোগ) একে আর্যও বলেন, ‘‘জাল নোট পাচার নিয়ে বিএসএফ যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনও রকম পাচার আটকাতে বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত। জাল নোট পাচারের ঘটনা আগের থেকে অনেক কমে এসেছে। সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনায় ইতিমধ্যেই বেশ কিছু পাচারকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy