পাশাপাশি: হাত লাগিয়েছেন পড়শিরা। নিজস্ব চিত্র
উৎসবে তাঁরা একসঙ্গে মাতেন। পরস্পর পাশে রইলেন বিষাদেও।
বাউড়িয়ার কারবালা মাঠ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা অনিমেষ ঘোষের অকালমৃত্যুতে তাঁর পরিবারের পাশে থাকতে এক মুহূর্ত ভাবেননি পড়শি মিজারুল মণ্ডল, শেখ সইদুল, শাজাহান মল্লিক, হায়দর মল্লিকরা। দাহকাজের খুঁটিনাটি ব্যবস্থা সম্পন্ন করা থেকে, শ্মশানযাত্রা— কিছুই বাদ রাখেননি তাঁরা। শনিবার দুপুরে দুই সম্প্রদায়ের এই ‘বন্ধন’ই চর্চিত হল বাউড়িয়া জুড়ে।
অনিমেষের বোন সুস্মিতা বলেন, ‘‘ছোট থেকে গ্রামে আমরা দুই সম্প্রদায়ের মানুষ এক সঙ্গে রয়েছি। আমাদের পুজোয় যেমন ওঁরা আনন্দ করেন, আমরাও ওঁদের ইদে আনন্দ করি। দাদার মৃত্যুর পর শাজাহান ভাই, মিজানুর ভাইরাই সব কাজ করেছেন। এই বিপদে যদি ওঁরা পাশে না থাকতেন, সমস্যায় পড়তাম।’’ তাঁদের উদ্যোগ নিয়ে সাহানুর বলেন, ‘‘প্রথমটা সঙ্কোচ হচ্ছিল। ভাবছিলাম, যদি কেউ কিছু বলেন। পরে ভাবলাম, বিপদে মানুষের পাশে থাকাই তো বড় ধর্ম। অনিমেষদার বোন বলছিলেন, দাহ করার লোক নেই। তাই এলাকার যুবকদের নিয়ে আমরা হিন্দু-মুসলমান এক হয়ে অনিমেষদার দেহ সৎকার করলাম।’’
উলুবেড়িয়া পুরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাউড়িয়া কারবালা মাঠের পাশের বেশির ভাগ বাসিন্দাই মুসলিম সম্প্রদায়ের। হিন্দু পরিবার রয়েছে কয়েকটি। অনিমেষেরা নয় বোন, দুই ভাই। এক বোন এবং এক ভাই বছর পাঁচেক আগে মারা যান। সাত বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বছর সাতচল্লিশের অনিমেষের ইমারতি দ্রব্যের দোকান রয়েছে ওই এলাকাতেই। ছোট বোন সুস্মিতাকে নিয়েই তিনি থাকতেন। শনিবার সকালে অনিমেষ হঠাৎ অসুস্থ হন। সুস্মিতা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে অনিমেষ মারা যান। দাদার মৃত্যুতে সুস্মিতা দিশাহারা হয়ে পড়েন। আত্মীয়-স্বজনকে খবর দেন। কিন্তু একা কী করে সব দিক সামলাবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না। তখন তাঁর সঙ্গী বলতে শুধু আত্মীয় অরুণ ঘোষ।
সুস্মিতার কান্নার আওয়াজে ওই বাড়িতে এসে জড়ো হন মিজারুল, হায়দররা। আত্মীয়স্বজন আসার আগে তাঁরাই সব দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নন। কেউ কিনে আনেন খাট, কেউ গীতা, কেউ মালা, কেউ নামাবলি। দুপুরে অনিমেষের আত্মীয়েরা এলে সকলে সৎকারে বের হন। সেখানে নিজেরাই বাঁশ ও কাঠ কেটে দাহ কাজে সহযোগিতা করেন মিজারুলরা। সম্প্রীতির এক নজির তৈরি হয়। এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন হাওড়া জেলার লেখক, নাট্যকার ও নাট্য পরিচালক অনুপ চক্রবর্তী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy