রাম ওরাওঁ। —নিজস্ব চিত্র।
শহর ছাড়িয়ে সর্ষে খেতের মধ্যে দিয়ে গ্রামের দিকে গিয়েছে চকচকে পিচ রাস্তা। কিছুটা যেতেই কিন্তু হোঁচট। গর্তে নয়, বৈপ্যরীত্যে। পাকা রাস্তার পাশেই মাটির ভাঙা দেওয়ালে শীতের আচ্ছাদন টাঙানো ত্রিপল! উন্নয়নের ছবিতে হঠাৎ এত ফারাক কেন? গ্রামের কিছু জায়গায় উন্নয়নের চিহ্ন থাকলেও ডাঙ্গা অঞ্চলের আদিবাসী প্রধান গ্রাম চকবাখরে প্রান্তিক কৃষক ও খেতমজুর পরিবারগুলির অবস্থা সব ক্ষেত্রে ভাল নয়। ভোট পেয়েছে বিজেপি। কৃষকদের সুরক্ষা দেওয়া হবে বলে মুষ্ঠি চালও নিচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সুবিধার ছিটেফোঁটাও পায়নি অনেক পরিবার। পায়নি রাজ্যের বেশ কিছু প্রকল্পে সুবিধাও। চকবাখর, জঙ্গলপুরে প্রদীপের নিচে আঁধার যেন একটু বেশিই ঘন। অলস দুপুরে উঠোনের রোদে মাদুর পেতে শীতঘুমের বিলাসিতা ফেলতে ফোমের ছেঁড়া জুতো পায়ে ভাঁটায় ইট ঢোলাইয়ের কাজে বের হচ্ছিলেন রাম ওরাওঁ।
প্রশ্ন: পঞ্চাশ বছর পার করে ফেলেছেন, তা-ও কাজে যেতে হচ্ছে?
রাম: জমি কমেছে। পরিবার বেড়েছে। কীভাবে চলবে, কেউ সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছে না। কতবার ঘুরলাম পঞ্চায়েত অফিসে। একটা ইন্দিরার ঘর দিয়ে দাও না তোমরা।
চোখে পড়ল, পাটকাঠির বেড়া ভেঙে পড়েছে মাটির উনুনের রান্নাঘরে। চাঙড় ভাঙা, মাটির ঘরের দেওয়ালে দীর্ঘদিন হাত লাগাতে পারেননি। যে বাবুরা মুষ্ঠিভিক্ষে নিতে এসেছিলেন, তাঁদের কেন উজ্জ্বলা গ্যাসের কথা বললেন না?
রাম: বলেছি তো। হবে হবে বলল। আবেদন করলাম দু’তিন বার। ঘুরলাম। হল কই? (এলাকার কয়েক জন অবশ্য উজ্জ্বলা গ্যাস পেয়েছেন)
প্রশ্ন: তা হলে তফসিলি জনজাতির কার্ড, জব কার্ড?
রাম: ২০১৭ সালের বন্যায় সব ভেসে গেল, কোনও রকমে বাড়ি খাড়া করলাম। তার পর থেকে ঘুরছি দ্বারে দ্বারে। হচ্ছে না।
প্রশ্ন: দুয়ারে সরকারের কেন্দ্র গ্রাম থেকে প্রায় ৮ কিমি দূরে। গিয়েছিলেন সেখানে? বলেছেন, এ সব কথা?
রাম: গিয়েছিলাম। স্বাস্থ্যস্বাথীর কার্ড পেয়েছি। কিন্তু ভিড়, হট্টগোলে বাকি সমস্যার কথা কেউ শুনল না। আর কোথায় গেলে হবে?
ভর দুপুরে কারা এসে এত প্রশ্ন করছে, জানতে আগ্রহী গ্রামের অনেকে। রামের বাড়ির পাশে একে একে হাজির রবীন্দ্রনাথ ওরাওঁ, বাকু মাড্ডিরা। অনেকেই এটা ওটা পায়নি বলে অভিযোগ তুলছেন। বিজেপি এলাকা থেকে মুষ্ঠি ভিক্ষা তুলছে। দলের নিচুতলার নেতারা এত সব অভিযোগের জবাবে বললেন, ‘‘বিজেপি জিতেছে বলেই এলাকায় উন্নয়ন করতে দেয়নি।’’ তা হলে কেন উজ্জ্বলা গ্যাস পাননি প্রান্তিক পরিবারগুলি?
মুষ্ঠিভিক্ষার কর্মকর্তারা: পাবে পাবে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।
মাঝির থান হয়েছে? জয় জোহার প্রকল্পে গ্রামে কেউ টাকা পাচ্ছে?
রবীন্দ্রনাথ, বাকুরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy