কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।—ফাইল চিত্র।
দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধ না মানা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ—জাতীয় পরিবেশ আদালতের এই নির্দেশে নড়েচড়ে বসল বিদ্যুৎ ভবন।
আদালতের রায় পর্যালোচনা করে দেখতে বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন দফতরে জরুরি বৈঠক হয়। বৈঠকে ছিলেন কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজারও। ১৯৮৪ সালে তিনটি ইউনিট নিয়ে তৈরি হয় কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পরে আরও তিনটি ইউনিট বসানো হয়। ২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিটি ইউনিট থেকে সর্বোচ্চ ১২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হত কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। তবে বিদ্যুতের চাহিদা না থাকায় বর্তমানে মাত্র একটি ইউনিট চালু রয়েছে।
প্রথম থেকেই ওই কেন্দ্রের দূষণ নিয়ে সরব ছিলেন এলাকাবাসী। বিষয়টি নিয়ে কৃষক সংগ্রাম পরিষদ এবং কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটি আন্দোলনে নামে। আন্দোলনের জেরে অন্তত ন'বার পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কেন্দ্রকে জরিমানা করে ।যার পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ এর পরে ৬টি ইউনিটের চুল্লির মুখে ইএসপি বা ছাকনি বসায়। ফলে বাতাসে ছাইয়ের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও সালফার-নাইট্রোজেন গ্যাস নিয়ন্ত্রণে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে খবর, ইউনিটগুলি অন্তত ৩৩ বছর আগের। পুরনো প্রযুক্তির ইউনিটগুলিতে সালফার-নাইট্রোজেন গ্যাস নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি প্রয়োগ করা খুবই সমস্যার। সে ক্ষেত্রে পুরনো ইউনিট বদলে নতুন ইউনিট বসানোও খরচ সাপেক্ষ। আর্থিকভাবে ধুঁকতে থাকা এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে এই মুহূর্তে বিপুল টাকা খরচ করে প্রযুক্তির সংস্কার ঘটানো কার্যত অসম্ভব।
এই পরিস্থিতিতে একমাত্র রাজ্য সরকারই পারে উদ্যোগী হয়ে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে বাঁচাতে। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আদালতের রায় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চিন্তা-ভাবনা করছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কী কাজ করতে হবে, সেগুলি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’
বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আগামীকাল আমার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ও দফতরের চেয়ারম্যানকে নিয়ে বৈঠকে বসব। হয় আমাদের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে হবে, না হলে পরিবেশ আদালতের রায় মেনে কাজ শুরু করতে হবে। তবে সেই নির্দেশ মেনে কেন্দ্র সংস্কার করতে গেলে বিপুল টাকার প্রয়োজন। যা দিয়ে নতুন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়। অর্থাভাবেই এতদিন এ ধরনের সংস্কার সম্ভব হয়নি। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব।’’
কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কমিটির মুখপাত্র নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ একাধিক বার জরিমানা করার পরেও হুঁশ ফেরেনি রাজ্য সরকারের। সঠিক সময়ে পদক্ষেপ করা হলে এই বিপুল খরচের ধাক্কায় পড়তে হত না তাদের। সরকারের উচিত কোলাঘাট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু করা। তা না হলে কয়েক হাজার কর্মচারী কাজ হারাবেন। কমবে বিদ্যুৎ উৎপাদনও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy