—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সন্দেশখালির পরে পূর্ব মেদিনীপুরে এনআইএ-র উপরে হামলায় রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিত হয়েছে ভূপতিনগরের নাম। বিরোধীদের মুখ থেকে শুরু করে সংবাদদের শিরোনামে বারবার উঠে আসছে ভগবানপুর-২ ব্লকের এই এলাকা। তবে জেলার এই ব্লক এবং সংলগ্ন আরও তিনটি ব্লকের বেশ কয়েকটি গ্রাম বহু বছর ধরেই উত্তেজনাপ্রবণ হিসাবে ‘জনপ্রিয়’। কখনও রাজনৈতিক সংঘর্ষে রক্ত ঝরেছে, কখনও বাড়ি-ঘরে অগ্নি সংযোগের অভিযোগ উঠেছে। বাম জমানা ঘুরে বর্তমান তৃণমূলের সময়েও সেই ‘জনপ্রিয়তা’ অব্যাহত।
ভগবানপুর-২, পটাশপুর-২, কাঁথি-২ এবং এগরা-২ ব্লক এলাকায় রয়েছে অর্জুননগর, বরজ, ভূপতিনগর, নাড়ুয়াবিলা, ভাজাচাউলি, আড়গোয়ালের মতো গ্রাম। রাজনৈতিক উত্তেজনা ওই সব এলাকায় নতুন কিছু নয়। ১৯৮২ সালে পটাশপুরের আড়গোয়ালে তৎকালীন কংগ্রেস কর্মীদের হাতে খুন হয়েছিলেন এক সিপিএম কর্মী। ১৯৯৯ সালে তৃণমূল কর্মীদের হাতে খুন হন অর্জুননগরের এক সিপিএম কর্মী। সে সময়ে তৃণমূল কর্মীদের হাতে ভাজাচাউলিতে চাঁদু শেখ নামে এক দাপুটে সিপিএম নেতা খুন হন বলেও অভিযোগ ছিল। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসে। এই আমলে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, গ্রামীন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোজন, পানীয় জল বা নিকাশির হাল ফিরেছে ওই এলাকায়। তবে রাজনৈতিক হিংসা আর অশান্তির ঘটনায় ছেদ পড়েনি। ২০২২ সালে নাড়ুয়াবিলাতে বোমা বিস্ফোরণে এক তৃণমূল নেতা-সহ তিন জন মারা যান। সেই মামলার তদন্তে এসে সম্প্রতি এনআইএ আক্রান্ত হয়েছে।
কিন্তু কেন শান্তি ফিরছে না?
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান, প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব, বেকারত্ব এবং কর্মসংস্থানের অভাবকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করছেন এক শ্রেণির নেতারা। তাই আশান্তিও মেটে না। এছাড়া দাবি, থানাগুলি থেকে অশান্তি প্রবণ গ্রামগুলির দূরত্ব যেমন বেশি, তেমনই অপরাধের পরে দুই ব্লকে মাঝে থাকা খাল পেরিয়ে দুষ্কৃতীরা থানা এলাকা বদল করে নেয়। ফলে তাদের ধরার প্রক্রিয়া ধীর হয়। যদিও কাঁথির এসডিপিও দিবাকর দাস বলছেন, ‘‘নতুন থানা বা ফাঁড়ি তৈরি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। তবে পুলিশ খবর পাওয়া মাত্র এলাকায় পৌঁছয়। নিয়মিত টহলদারি চলে ওই সব এলাকায়।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূপতিনগরের কয়েকজন তৃণমূল নেতা জানাচ্ছেন, অনেক জায়গায় বিরোধীদের ভোট দানে বাধা দেন। তখন সংঘাত অবশ্যম্ভাবী হচ্ছে। নাড়ুয়াবিলার স্থানীয় বাসিন্দারা মূলত কৃষিকাজে নির্ভরশীল। স্থানীয় টনিয়াভিলা গ্রামের এক যুবক অয়ন পন্ডা বলছেন, ‘‘পড়াশোনা ছেড়ে চাষাবাদ করতে হচ্ছে। বাইরে গিয়েও ঠিক মতো কাজ করতে পারছি না।’’ অয়নের মতো এমন অনেকেরই দাবি, কাজের সুযোগ না থাকায় বহু যুবককে ধীরে ধীরে রাজনীতির আঙিনায় আনা হচ্ছে। পরে তাঁরাও হিংসা আর অশান্তিতে জড়িয়ে পড়ছেন।
এলাকার পরিস্থিতির জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছে শাসক এবং বিরোধীরা। সিপিএম নেতা ঝাড়েশ্বর বেরা বলছেন, ‘‘শাসকদলের এলাকা দখলের রাজনীতির জন্য রক্ত ঝরছে।’’ বিজেপির জেলা (কাঁথি) সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডলের কথায়, ‘‘ওই সব এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। কম বয়সীরা যাতে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে, সে জন্য শাসকদল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’’ তৃণমূলের অবশ্য দাবি, কংগ্রেস এবং বাম জমানার তুলনায় বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে রাজনৈতিক হিংসা কমেছে। তৃণমূলের জেলা (কাঁথি) সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডা বলছেন, ‘‘শাসকদল উন্নয়ন পৌঁছে দিচ্ছে। তবে বিরোধীরা আশান্তির জন্য প্ররোচিত করছে জনতাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy