Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
digha

Digha: ঝুলছে প্রেমিকের দেহ, দিঘার হোটেলে সেই ঘরেই রাত কাটালেন ‘লিভ-ইন’ সঙ্গিনী!

হোটেলের ঘরে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথম থেকেই সঙ্গিনী মালা ঘোষের ভূমিকাকে আতশকাচের তলায় রাখছে।

আতশকাচের তলায় সঙ্গিনী মালা ঘোষের ভূমিকা

আতশকাচের তলায় সঙ্গিনী মালা ঘোষের ভূমিকা নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দিঘা ও ডানকুনি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২২ ১৯:৩৬
Share: Save:

হোটেলের ঘরে ঝুলছে সঙ্গীর ঝুলন্ত দেহ। খাটের উপর নির্লিপ্ত ভাবে বসে রয়েছেন সঙ্গিনী। ভয় বা আতঙ্কের লেশমাত্র নেই তাঁর চোখেমুখে। সারা রাত তিনি ও ভাবেই কাটিয়েছেন বলে হোটেলকর্মী এবং পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। দিঘায় ঘুরতে গিয়ে হোটেলের ঘরে হুগলির বাসিন্দা রাম উপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথম থেকেই তাঁর সঙ্গিনী মালা ঘোষের ভূমিকাকে আতশকাচের তলায় রাখছে। প্রাথমিক ভাবে মালাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলাও রুজু করেছে তারা। যদিও রাম যে দিঘায় গিয়েছেন, তা কোনও ভাবেই জানতেন না তাঁর স্ত্রী। এমনকি রামের জীবনে মালার অস্তিত্ব সম্পর্কেও তাঁর কোনও ধারণা ছিল না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার নিউ দিঘার একটি হোটেলে এসে উঠেছিলেন হুগলির ডানকুনি পুরসভার হিমনগরের বাসিন্দা বছর তেতাল্লিশের রাম। সঙ্গে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের ন’পাড়ায় বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের মালা। তাঁরা লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তিনি। সোমবার সকালে মালার ডাকাডাকিতে হোটেলকর্মীরা ঘরে এসে রামের ঝুলন্ত দেহ দেখেন। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। এর পর পুলিশ এসে রামের দেহ উদ্ধার করে। মালাকেও আটক করে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ।

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মালা দাবি করেছেন, রাতে মত্ত অবস্থায় হঠাৎই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন তাঁর ‘প্রেমিক’। মালা বাধা দিতে গেলে তাঁর উপর উপর চড়াও হন রাম। মারধরও করেন। এর পর মালা বারান্দায় চলে যান। সেই সময়েই রাম আবার গলায় ফাঁস দেন। এবং সিলিং থেকে ঝুলে পড়েন বলে মালার দাবি। পুলিশকে মালা বলেছেন, ‘‘আমরা লিভ-ইন সম্পর্কে ছিলাম। গত কাল (রবিবার) আমরা দিঘায় বেড়াতে এসেছিলাম। তার পরেই এই ঘটনা। আমিই সকালে সকলকে এই ঘটনা জানিয়েছি।’’ এর পর মালা সম্পর্কে খোঁজখবর করা শুরু করেন তদন্তকারীরা। জানা যায়, মালা পেশায় পানশালার নর্তকী।

রামের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। জানা যায়, তাঁর আসল বাড়ি উত্তরপ্রদেশে। বছর দশেক আগে এ রাজ্যে এসে ডানকুনিতে থাকা শুরু করেন। বাড়িতে স্ত্রী অনিতা উপাধ্যায় ও তিন সন্তান রয়েছে। পরিবহণ সংক্রান্ত ব্যবসা ছিল রামের। অনিতা বলেন, ‘‘হলদিয়ায় কাজ আছে বলে রবিবার ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ও। রাতে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বিকেলের দিকে আমাকে ফোন করে বলে, গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে। রাতে আর বাড়ি ফেরেনি।’’ তাঁর দাবি, সকালে স্বামী বাড়ি না ফেরায় তিনি সকালে ফোন করেন। কিন্তু রামের মোবাইল ধরেন এক মহিলা। তিনি নিজেকে মালা পরিচয় দিয়ে অনিতাকে জানান, রাম গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

অনিতার দাবি, মালা কেন কোনও মহিলার সঙ্গেই যে তাঁর স্বামীর কোনও রকমের সম্পর্ক আছে, তা তিনি জানতেন না। অনিতার কথায়, ‘‘আমি এ সব কিছুই জানতাম না। রাম আত্মহত্যা করেনি। খুন করা হয়েছে ওকে। ওই মহিলা তো বটেই, আরও এক জন এই খুনের সঙ্গে জড়িত।’’ তবে মালার পাশাপাশি আর কার দিকে অনিতা ইঙ্গিত করছেন, তা স্পষ্ট নয়।

অনিতার দাবিও তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে। তিনি বলছেন, এ সব বিষয়ে তাঁর কিছু জানা ছিল না। তা হলে তিনি কী ভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন, রামের খুনের ঘটনায় মালার সঙ্গে আরও এক জন ছিলেন? অন্য এক জনের প্রসঙ্গ তুললেও তাঁর নাম কেন তিনি প্রকাশ করছেন না! শুধু অনিতা নন, মালার বয়ানও তদন্তকারীদের কপালে ভাঁজ তৈরি করেছে। কী ভাবে ঝুলন্ত মৃতদেহের সঙ্গে একটা গোটা রাত একা কাটালেন মালা? কোনও রকম চিৎকার চেঁচামেচি না করে যে ভাবে হোটেলকর্মীদের শান্ত মাথায় ডেকে পাঠিয়েছেন, অনিতার ফোনের জবাব দিয়েছেন এবং পুলিশের প্রশ্নোত্তর পর্ব সামলাচ্ছেন, তাতে তদন্তকারীরা ভীষণই আশ্চর্য হচ্ছেন।

রামের দেহ ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্তের জন্য কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দিঘা থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে মালাকে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। এই ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

digha unusual death lover
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy