সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার প্রাপক টুরিয়া চাঁদ বাস্কে। —নিজস্ব চিত্র।
লালগড়ের বাঘ তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশ জুড়ে আলোড়ন। সেই সময়ে আনন্দবাজারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টুরিয়াচাঁদ বাস্কে জানিয়েছিলেন, ঝাড়গ্রামের লালগড়ের বাঘ তাঁকে তখনও তেমন আলোড়িত করেনি। তাই তিনি বাঘকে বিষয় করে কিছু লেখেননি। যা কিছু তাঁর সত্তাকে নাড়া দেয় তা নিয়েই লেখেন। এ বছর সাঁওতালি ভাষার সাহিত্যিক হিসেবে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন টুরিয়াচাঁদ বাস্কে। পুরস্কার প্রাপ্তি ‘জবা বাহা’ গল্পগ্রন্থের জন্য।
পুরস্কার পাওয়ার পরে তিনি বলেন, ‘‘সংকলনে ২০টি গল্প আছে। গল্পগুলো মানুষের জীবনের টানাপড়েন নিয়েই। এই গল্প ইংরেজিতে অনুবাদ হলে ইংল্যান্ডের মানুষ উপলব্ধি করবেন। অন্য ভাষায় অনুবাদ হলে সেই এলাকার মানুষ যোগসুত্র খুঁজে পাবেন। কেবলমাত্র আদিবাসী জীবন বা জঙ্গলমহল নিয়েই আবদ্ধ নয় এই গল্প সংকলন।’’
পোশাকি নাম তারাসিন বাস্কে। সাহিত্য অকাদেমির ওয়েবসাইটে পুরস্কার প্রাপকদের নামের জায়গায় তারাসিন নামটাই লেখা। বন্ধনীতে টুরিয়াচাঁদ। টুরিয়াচাঁদের অর্থ ‘ছোট চাঁদ’। বুধবারই অকাদেমি ২৪টি ভাষার পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা করেছে।
আদতে ঝাড়গ্রামের লালগড়ের পাঁপুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা টুরিয়াচাঁদ। কর্মসূত্রে থাকেন হলদিয়ায়। এখানকার বাবুপুর এগ্রিকালচার হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক। সাঁওতালি ভাষায় তাঁর কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, সংকলন, গান, চিঠি-সহ ৩১টি গ্রন্থ রয়েছে। নিজের লেখা প্রিয় কাব্যগ্রন্থ ‘বাছাও সিৎ অনড় হেঁ’ এবং গল্পগ্রন্থ ‘কাহিনি বাহা মালা’। পুরুলিয়ার সিদো কানহো এবং বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কবিতা ও প্রবন্ধ পড়ানো হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে ত্রৈমাসিক সাঁওতালি পত্রিকা ‘জিউয়ী প্রকাশ করছেন। ‘জিউয়ী’র অর্থ প্রাণ। ২০০০ সাল থেকে প্রকাশ করেন ‘তীরন্দাজ’ নামে গবেষণামূলক পত্রিকা। মূলত সাঁওতালি সংস্কৃতি তুলে ধরাই এই পত্রিকার উদ্দেশ্য। আদিবাসী সমাজের অধিকার ও বঞ্চনার কথাও লেখা হয়। তাঁর লেখায় বারবার আসে জঙ্গলমহলের মানুষের কথা।
২০১৫ সালে ‘সারদাপ্রসাদ কিস্কু’ পুরস্কার পান। ২০১৯ সালে পান ‘সাধু রামচাঁদ স্মৃতি’ পুরস্কার। ২০২৩ সালটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে টুরিয়াচাঁদের। এ বছরেই রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষারত্ন’ পেয়েছেন। অকাদেমি পুরস্কারের আশা ছিল? সাহিত্যিক বলেন, ‘‘অগস্ট মাসে সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পায় আমার গল্পগ্রন্থ। তার পর আমার কাছ থেকে বই চাওয়া হয়। এর পরেও বাছাই পর্ব থাকে।’’ এই মুহূর্তে একা রয়েছেন হলদিয়ার বরদার ভাড়াবাড়িতে। স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে। পুত্র কন্যারা কলকাতা-আসানসোলে। খুশির মুহূর্ত পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করতে পারছেন না তিনি। পুরস্কার প্রাপ্তিতে প্রবল খুশি হলেও একটা দুঃখবোধ কাজ করছে। টুরিয়াচাঁদ বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের এই পুরস্কার বিরাট পাওনা। আমি অভিভূত। জঙ্গলমহলের দুই শিক্ষকের কথা মনে পড়ছে। একজন ফণিভূষণ গোস্বামী ও অন্যজন মঙ্গল সোরেন। ওঁরা আমার আদর্শ শিক্ষক। আমার জীবনের ধ্রুবতারা। ওঁদের কথাও লিখছি আমার একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy