দলবদলের পর তাপসী মণ্ডল কার্যত অন্তরালে চলে গিয়েছেন। বিজেপিতে থাকাকালীন এলাকার সব দলীয় কার্যক্রম, সভা ও অনুষ্ঠানে তাঁকে দেখা যেত। বিভিন্ন বিষয়ে দলের মুখপাত্র হিসাবে তাঁর বক্তব্যও শোনা যেত। কিন্তু দল বদলে তৃণমূলে যাওয়ার পর তাপসী কার্যত ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন এবং সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন বলে রাজনৈতিক মহলের খবর।
মঙ্গলবার তাঁর হলদিয়ার বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। জানানো হয়েছে যে, তিনি কলকাতায় গিয়েছেন। ফোন করা হলে তিনি বার বার ফোন কেটে দিয়েছেন। তৃণমূলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আপাতত তাপসীকে একটু ‘ধীরে চলা’র নির্দেশ দিয়েছেন, সংযত ও নীরব থাকতে বলেছেন। তাই আপাতত দলীয় সভা সমাবেশ ও সাংবাদিকদের তিনি একটু
এড়িয়ে যাচ্ছেন।
‘ধীরে চলার’ প্রধান কারণ, তৃণমূলে স্থানীয় স্তরে তাপসীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ওঠা প্রশ্ন। তিনি তৃণমূলে আসায় এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ খুশি নন। এবং তাঁরা এখনও পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ না করে নিজেদের ক্ষোভ জাহিরও করেছেন। তার উপর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগামী বিধানসভা নির্বাচনে হলদিয়ায় তৃণমূল তাপসীকে প্রার্থী করলে তাঁকে বলে বলে হারাবেন বলে ঘোষণা করেছেন। তাই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব আগে জল মেপে নিতে চাইছেন।
তৃণমূলের জেলা স্তর থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে তাপসীকে। কিন্তু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর ১০ দিন পার হয়ে গেলেও স্থানীয় স্তরে সংবর্ধনা সভা না হওয়াতেও আলোচনা শুরু হয়েছে শিল্প শহরজুড়ে। হলদিয়া শহর তৃণমূলের সভাপতি মিলন মণ্ডলকে দেখা যায়নি কোনও সংবর্ধনা সভায়। হলদিয়ার বিধায়কের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেখা যায়নি হলদিয়া পুরসভার দুই প্রাক্তন পুর প্রধানকে। তাপসীকে হলদিয়ায় কোন ভূমিকায় তৃণমূল আনতে চাইছে, তাঁকে দিয়ে কোন কর্মসূচি করাতে চাইছে, সে বিষয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে এখনও কোনও আলোচনা করা হয়নি বা তাঁদের কিছু জানানো হয়নি।
প্রাক্তন পুরপ্রধান সুধাংশু মণ্ডল বলেন," সামনাসামনি সাক্ষাৎ না হলেও ফোনে কথা হয়েছে। বন্ধু বাড়লে শক্তি বাড়ে। জেলা নেতৃত্ব নিশ্চয়ই কোনও সমন্বয় কর্মসূচি নেবেন। যেই কর্মসূচিতে বিজেপি থেকে আগত নেত্রী এবং স্থানীয় নেতৃত্বর সঙ্গে সমন্বয় সাধন
করা হবে।"
তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, হলদিয়ায় যাঁর বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতারা এতদিন তোপ দেগেছেন রাতারাতি সব ভুলে তাঁকে বন্ধু ভাবাটা তাঁদের পক্ষে সহজ নয়।তা হলে সমন্বয় সম্ভব হবে কী করে? এজেলা সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন,"রাজ্য নেতৃত্ব যেমন নির্দেশিকা দেবেন সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে। সঠিক সময়ে সব দেখতে পাবেন।"
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)