Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Minor Murder Case Verdict

বান্ধবীর ষড়যন্ত্রে নাবালিকাকে গণধর্ষণ ও খুন! ১০ বছর পর রায় দিল তমলুক আদালত

বান্ধবীর প্রেমে পথের কাঁটাকে সরিয়ে দিতে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী খুনের এক দশক পর ৩ অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড !

An image of Law and Order

—প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৫৭
Share: Save:

বন্ধু যে প্রেম করে, সে কথা বাড়িতে বলে দিয়েছিল মেয়েটি। প্রেমে বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় সহপাঠীকে ‘বড় শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করে সেই বন্ধু। তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে তুলে দিয়েছিল নিজের প্রেমিক ও তার দুই সঙ্গীর হাতে। পরে অর্ধনগ্ন অবস্থায় সেই নাবালিকা মেয়েটির দেহ উদ্ধার হয় রাস্তার ধার থেকে। পুলিশ জানতে পারে, তাকে নৃশংস ভাবে গণধর্ষণের পর গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়। প্রায় ১০ বছর পর ধরে মামলা চলার পর বৃহস্পতিবার সেই ঘটনায় জড়িত তিন অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল তমলুকের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট তহবিল থেকে মৃত নাবালিকার পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তমলুক আদালতের সরকারি আইনজীবী (স্পেশাল পিপি) সৌমেন দত্ত জানান, নাবালিকাকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে একাধিক ধারায় সাজা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি আর্থিক জরিমানাও রয়েছে। সৌমেন জানান, ২০১৪ সালের অক্টোবরের ১২ তারিখ নাবালিকার দেহ উদ্ধারের পরেই তিন অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এই মামলায় ২৭ জন সাক্ষীর বয়ানের ভিত্তিতে বুধবার অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তমলুকের সেকেন্ড এডিজে রিনা সাউ অভিযুক্তদের সাজা শুনিয়েছেন।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সৌমেন জানান, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তমন্না খাতুন (নাম পরিবর্তিত)-এর প্রেমের কথা তার বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছিল পটাশপুর গ্রামের বাসিন্দা মেঘনা। এর পরেই মেঘনাকে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে তমন্না। ২০১৪ সালের ১১ অক্টোবর স্কুল থেকে ফেরার পর মেঘনার মায়ের ফোনে কল করে তাকে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠায় তমন্না। দু’জনে রাস্তা দিয়ে গল্প করতে করতে হেঁটে যাচ্ছিল। সেই সময়েই তমন্নার প্রেমিক ও তার দুই সঙ্গী গাড়িতে করে এসে মেঘনা টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে চম্পট দেয়। মেয়ে বাড়িতে না ফেরায় মেঘনার মা তমন্নার বাড়িতে হাজির হন। প্রথমে বান্ধবীর বিষয়ে কিছুই জানাতে অস্বীকার করে তমন্না। অগত্যা পটাশপুর থানায় মেয়ের নিখোঁজ ডায়েরি করে মেঘনার পরিবার। ইতিমধ্যে গ্রামবাসীদের চাপে তমন্না স্বীকার করে, তার প্রেমিক-সহ তিন জন মেঘনাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে। এর পরেই দাঁতন থানার খণ্ডরি গ্রামের রফিক আলি, উকিল আলি ও পাশের গ্রামের গাড়িচালক বিশু ঘড়াইয়ের বাড়িতে যায় মেঘনার পরিবার। তবে কাউকেই বাড়িতে পাওয়া যায়নি।

সরকারি আইনজীবী জানান, পর দিন ১২ অক্টোবর সকালে বেলদা থানা এলাকায় রাস্তার ধার থেকে মেঘনার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। অর্ধনগ্ন দেহ, হাত পিছমোড়া করে বাঁধা অবস্থায় দেহটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এর পরেই অভিযুক্ত রফিক, উকিল ও বিশুকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামবাসীরা। সেই থেকেই তিন অভিযুক্ত জেলে ছিলেন। সৌমেন বলেন, “প্রথমে মামলাটি পশ্চিম মেদিনীপুরে ছিল। তবে হাই কোর্টে অভিযুক্ত পক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে মামলাটি তমলুক জেলা আদালতে স্থানান্তরিত হয়। বদল হয় মামলার সরকারী আইনজীবী। তমলুকে নিযুক্ত হন স্পেশাল পিপি। জেলা আদালত মামলাটিকে অতিরিক্ত জেলা বিচারকের এজলাসে স্থানান্তরিত করেন। ১০ বছর সময়ে এই মামলায় দুই বিচারপতি বদল হয়ে গিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত অভিযুক্তদের সাজা ঘোষণা হল।”

অন্য বিষয়গুলি:

Law and Order Tamluk Minor Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy