সুমিতাদের বাড়ির দাওয়ায় চলছে পড়াশোনা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
ঝাড়গ্রামের জারালাটা গ্রামের লোধা পাড়ার সুমিতা ভুক্তা ও আমেরিকার সিয়াটলের অমৃতা ঘোষ। কেউ কাউকে চেনেন না। তবে দু’জনেই জুড়েছেন লোধা শিশুদের ‘স্বপ্নের উড়ান’-এ।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে কিলোমিটার পাঁচেক দূরে জারালাটা গ্রামের লোধা পাড়ায় স্বেচ্ছাশ্রমে চলা একটি অবৈতনিক লোধা শিশুদের পাঠশালার শিক্ষিকা হলেন সুমিতা। লোধা পাড়ার একমাত্র স্নাতক তিনি। শিক্ষক, ব্যবসায়ী-সহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে সুমিতাদের বাড়ির দাওয়ায় প্রতি বিকেলে বসে শিশুদের পাঠশালা ‘স্বপ্নের উড়ান’। করোনা কালে অক্ষর আর সংখ্যা ভুলে যাওয়া লোধাশিশুরা ফের ছন্দে ফিরেছে ওই পাঠশালার সৌজন্যে। কিন্তু সুমিতাদের অপরিসর দাওয়ায় উনুনে রান্না হয়। কাঠের ধোঁয়ায় পড়তে কষ্ট হয় খুদেদের।
সমস্যা জানতে পেরে সিয়াটল থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অমৃতা। তিনি পেশায় সফ্টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। অমৃতার শিকড় রয়েছে ঝাড়গ্রামে। বহু বছর আগে ঝাড়গ্রামের স্কুলে পড়েছেন। লোধা শিশুদের পাঠশালায় ছাউনি দেওয়া ঘর তৈরি করে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন অমৃতা। তাঁর অর্থ সাহায্যে পাঠশালার স্থায়ী ঠিকানা তৈরির কাজ চলেছে সুমিতাদেরই বাড়ির চত্বরের এক পাশে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক পেশায় ব্যবসায়ী রবিন প্রামাণিক ও সভাপতি পেশায় শিক্ষক জয়দেব সিংহ জানালেন, করোনা কালে লোধাপাড়ায় খাবার ও পোশাক পৌঁছে দিতে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল সুমিতার সঙ্গে। একলব্য আদর্শ স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ থেকে ২০২০ সালে কলাভিবাগের স্নাতক হন সুমিতা। তাঁর মা দিনমজুরি করে সংসার চালান। লোধা পাড়ায় ৮২টি পরিবারের সকলেই প্রায় দিনমজুরি করেন। সুমিতাই একমাত্র উচ্চশিক্ষিত। করোনা কালে স্কুল বন্ধ থাকায় লোধা পাড়ার শিশুরা পড়াশোনাই ভুলে গিয়েছিল। বিষয়টি দেখে এগিয়ে আসেন রবিনরা। রবিন ও জয়দেব বলছেন, সুমিতার দৌলতে মাত্র দু’মাসে পড়ুয়া সংখ্যা ৪৫ হয়েছে।’’
এই পাঠশালার স্লোগান: ‘লিখি পড়ি জীবন গড়ি’। চতুর্থ শ্রেণির অগ্নি ভুক্তা, শোভা ভুক্তা, তৃতীয় শ্রেণির ইন্দু নায়েক, ঝুমা ভুক্তারা এখন গড়গড়িয়ে রিডিং পড়ছে। যোগ-বিয়োগ করছে। মুক্তোর মতো হাতের লেখায় পাতা ভরছে তাদের। লোধা শিশুরা ছবি আঁকাও শিখছে। সুমিতার সঙ্গে পঙ্কজ নায়েক, সরোজ দাস, গৌতম পাইন, তপন ষড়ঙ্গী, সুধাময় সেনের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক এবং রেল পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার ত্রিদিব সিংহের মতো অনেকেই স্বেচ্ছাশ্রমে পাঠশালার শিশুদের পড়াচ্ছেন। রবিন ও জয়দেব বলছেন, ‘‘আমাদের এক সহযোদ্ধা শিক্ষক তমাল চক্রবর্তী অমৃতার সহপাঠী ছিলেন। তাঁর মাধ্যমে সব জেনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অমৃতা।’’
প্রবাসী আর দেশি, দুই ভূমিকন্যাও এমন উদ্যোগে থাকতে পেরে তৃপ্ত। সিয়াটল থেকে অমৃতা বলছিলেন, ‘‘আদিম জনজাতির শিশুরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে নিজেদের প্রমাণ করতে পারে। সেটা জয়দেববাবুরা দু’মাসে দেখিয়ে দিয়েছেন। ওঁদের কর্মকাণ্ডের পাশে আছি।’’ আর সুমিতা বলছেন, ‘‘জয়দেব স্যরদের সাহায্যে গ্রামের সব লোধা শিশুদের পড়াশোনার গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টায় অনেকটা সফল হয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy