জনরোষ: খুনে অভিযুক্ত কিশোরের বাড়িতে ভাঙচুর। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
দিন কয়েকের মধ্যেই ক্ষতি হবে। পাড়ার এক বালক সম্পর্কে কিশোর ‘তান্ত্রিকে’র সেই ভবিষ্যবাণী ফলেও গেল। একেবারে চরম ক্ষতি হল বালকটির। তান্ত্রিক কিশোরের ঘরেই মিলল তার দেহ।
তন্ত্রমন্ত্রের মতো কুসংস্কারের পরিণতিতে মৃত্যুর সাক্ষী থাকল খড়্গপুর আইআইটি-র অদূরের এক গ্রাম। শনিবার রাতের ওই ঘটনায় সাত বছরের ওই বালককে খুনের অভিযোগে পড়শি কিশোর ও তার পরিবারের আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর তার পরে চোখ খুলেছে গ্রামবাসীর। দু’দিন আগেও যারা ওই কিশোরকে ‘ঈশ্বরের দূত’ বলে ভরসা করছিল, কখনও তাকে ভাবছিল গৌর-নিতাই, কখনও আবার মনসা, সেই ‘খুনি’ কিশোরের বাড়িতেই ভাঙচুর চলল দফায় দফায়।
প্রযুক্তিবিদ্যার পীঠস্থান আইআইটি ও রেলশহর খড়্গপুরের অদূরেই গ্রামীণ থানা এলাকার এই গ্রাম। সেখানে এমন অন্ধবিশ্বাস কী ভাবে শিকড় বিস্তার করল, প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে কারণ আগামী সপ্তাহেই সেই মানুষটি দু’শো বছরের জন্মদিন, যিনি শিক্ষার আলোয় মনের অন্ধকার দূর করার রাস্তা দেখিয়েছিলেন। বিদ্যাসাগরের নিজের জেলায় তাঁর দু’শো বছর পরেও তন্ত্রমন্ত্র আর তার জেরে এক নাবালকের মৃত্যু ও আরেক নাবালকের গ্রেফতার তাই আলোচনার কেন্দ্রে।
গ্রামের তরুণ শহরের প্রিয়নাথ হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র কুশ নায়েক বলছিল, “এ সব যে বুজরুকি তা আমরা জানি। কিন্তু এই কিশোরকে দিয়ে ওর পরিবারের লোকেরা এ সব দেবতা ভর হওয়ার নাটক করাত। গ্রামের বয়স্করা তা বিশ্বাসও করত। আমরা বোঝালেও কেউ বোঝেনি বলেই এই দিনটা দেখতে হল।” এই ঘটনাতেও অবশ্য তন্ত্রমন্ত্রের প্রতি আস্থা এতটুকু কমেনি। খোদ মৃত বালকের জেঠিমা বলছেন, “এই কিশোরের পরিবার মিথ্যা বলত এখন বুঝছি। অনেক বছর আগে আমার এক দেওরকে ওরাই পুকুরে ডুবিয়ে খুন করেছিল। তবে যাঁরা সত্যি তন্ত্রবিদ্যা জানেন তাঁরা অনেক কিছু করতে পারেন বলেই বিশ্বাস করি।”
সাত বছরের যে বালকের মৃত্যু হয়েছে, সে প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। আর খুনে অভিযুক্ত বারো বছরের কিশোর সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। প্রশ্ন উঠছে স্কুলে গিয়ে, প্রথা মাফিক পড়াশোনা করেও তন্ত্রমন্ত্রে আস্থা জন্মাচ্ছে কী করে! অভিযুক্ত কিশোর যে স্কুলের ছাত্র, সেই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “ঘটনা শুনে তো শিউরে উঠছি। আমরা নিয়মিত ক্লাসে কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে বার্তা দিই। বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে আমাদের ছাত্ররা পুরস্কৃতও হয়েছে। আসলে শুধু শিক্ষাক্ষেত্র নয়, গোটা সমাজ, পরিবার সচেতন হলে তবেই এ সব রোধ করা সম্ভব।”
অবশ্য গ্রামে এখনও পর্যন্ত কোনও কু-সংস্কার বিরোধী সচেতনতার বার্তা কেউ দেয়নি। ঘটনার কথা স্বীকার করেই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য খুকু মুদি বলছেন, “আমি নিজে এ সব দেরতার ভরে বিশ্বাস করি না। তবে গ্রামের অনেকে বিশ্বাস করে। তবে এ বার মানুষকে সচেতন করতে কিছু একটা করতে হবে।”
নাবালকের মৃত্যুতে হুঁশ ফিরেছে প্রশাসনেরও। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী বলেন, “আমরা শীঘ্রই ওই গ্রামে সচেতনতা শিবির করব।” আর খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “নানা সময়ে আমরা কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতন শিবির করি। এ বার ওই গ্রামে নিশ্চয় সচেতনতা শিবির করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy