কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে খুন ও ধর্ষণের ঘটনা থেকে শুরু করে মেদিনীপুর মেডিক্যালের স্যালাইন কাণ্ড— থিমের মোড়কে সবই উঠে আসছে সরস্বতী পুজোয়। মেদিনীপুরের কলেজ স্কোয়্যারে। এখানকার সরস্বতী পুজোর থিমে রাজনৈতিক যুযুধান শিবিরের তরজা থাকেই। তাল ঠোকাঠুকি হতে চলেছে এ বারও! এতেই পুজো জমে ওঠার অপেক্ষায়! বছর ঘুরলেই রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। তাই টক্কর যেন এ বার আরও বেশি!
শুক্রবার কলেজ স্কোয়্যারে কান পেতে শোনা গিয়েছে, কোথাও ব্যঙ্গচিত্রে বিজেপি, তৃণমূলকে আক্রমণ করা হবে। কোথাও সিপিএম কিংবা কংগ্রেসকে। শহরের কলেজ স্কোয়্যারের সরস্বতী পুজোর আলাদা পরিচিতি রয়েছে। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে রাজনীতির আকচা-আকচি। পুজো কমিটিগুলি ‘মডেল’ তৈরি করে। বিভিন্ন ‘মডেলে’র পাশে লেখা থাকে। এই লেখাগুলোই পুজোর থিমের মূল আকর্ষণ। বেশিরভাগ লেখাই থাকে ব্যাঙ্গাত্মক। যা কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলকে খোঁচা দেয়। থাকে ব্যঙ্গচিত্রও। অন্য দিকে, এখানকার বেশিরভাগ পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র-যুব সংগঠনের কর্মীরা। কোনও পুজোর নেপথ্যে থাকেন টিএমসিপি বা সিপি’র কর্মীরা। কোথাও আবার এসএফআই বা এবিভিপি’র কর্মীরা।
কাল, রবিবার সরস্বতী পুজো। হাতে তেমন সময়ই নেই! তাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কংগ্রেস প্রভাবিত ‘প্রগতি’র পুজোর থিমে আরজি করের ঘটনা, মেডিক্যালের স্যালাইন কাণ্ড থাকছে। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা মহম্মদ সইফুলের কথায়, ‘‘আরজি করের ঘটনার নেপথ্যের কারণ কী, তা আজও অস্পষ্ট। পুজোর থিমে আরজি করের বিষয়টি আমরা রাখছি।’’ বিজেপি প্রভাবিত ‘গরিমা’র পুজোয় ব্যঙ্গচিত্রের পাশে লেখা থাকছে, ‘ধর্ষণের ভিডিয়ো ফুটেজ নেই, মানে ধর্ষণ হয়নি’! সন্দেশখালির স্মৃতি উস্কে দিয়ে থাকছে ‘পিঠা খাওয়ার অফিস’ও! পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা রমাপ্রসাদ গিরি বলছেন, ‘‘ভবিষ্যতে আর কাউকে নির্যাতিতা হতে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা আন্দোলনে থাকছি।’’
বিজেপি প্রভাবিত ‘জাগরণ’এর পুজোয় থাকছে স্যালাইন কাণ্ডের থিম। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা অরূপ দাসের কথায়, ‘‘প্রসূতিদের বিষ-স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। থিমে বিষয়টি রাখছি।’’ তৃণমূল প্রভাবিত ‘অগ্নিকন্যা’র পুজোর থিমে আবার আরজি কর নিয়ে বিরোধীদেরই নিশানা করা হচ্ছে। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা বুদ্ধ মণ্ডলের কথায়, ‘‘আরজি করের জঘন্য ঘটনায় আমরা সকলেই প্রতিবাদী। কিন্তু একদল লোক মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্ররোচনা ছড়িয়েছেন। মনে রাখতে হবে, আমাদের মুখ্যমন্ত্রীই প্রথম ফাঁসি চেয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)