Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মহিলা বলেই ‘একঘরে’! ঋণ শোধই দুশ্চিন্তা সায়রার

সবিতা পিঙ্ক ক্যাব চালিয়ে সংসার টানছেন। কিন্তু সায়রার ক্ষেত্রে ছবিটা উল্টো।

স্টেশনে গাড়ি নিয়ে সায়রা বানু।

স্টেশনে গাড়ি নিয়ে সায়রা বানু।

দিগন্ত মান্না
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০০:৩৯
Share: Save:

একই ব্লকের বাসিন্দা। দু’জনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্পের অংশ। কিন্তু একজন যখন সেই প্রকল্পে ভর করে সংসার সামলাচ্ছেন, তখন অন্যজনকে মহিলা বলে কর্মস্থলে ‘একঘরে’ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

মহিলাদের স্ব-নির্ভরতায় সরকার চালু করেছে ‘পিঙ্ক ক্যাব’ পরিষেবা। মহিলাদেরই হাতে থাকবে ওই ‘ক্যাবে’র স্টিয়ারিং। পূর্ব মেদিনীপুরে ওই পরিষেবার উদ্বোধন করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। প্রকল্পে গোলাপি-সাদা গাড়ি পেয়েছেন হাউরের সবিতা জানা মণ্ডল এবং চৈতন্যপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা সায়রা বানু।

সবিতা পিঙ্ক ক্যাব চালিয়ে সংসার টানছেন। কিন্তু সায়রার ক্ষেত্রে ছবিটা উল্টো। তাঁর অভিযোগ, শুধু মহিলা হওয়ার জন্যই অন্য গাড়ির পুরুষ চালকেরা তাঁকে কার্যত ‘এক ঘরে’ করে রেখেছেন। অভিযোগের তির পাঁশকুড়া স্টেশন লাগোয়া রেলের কার পয়েন্টের যে সব চালকদের বিরুদ্ধে, তাঁরা শাসক দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির ছাতার তলায় বলেই দাবি।

স্থানীয় সূ্ত্রে খবর, পাঁশকুড়া স্টেশন এলাকায় রয়েছে রেলের নিজস্ব পার্কিং পয়েন্ট। সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গা যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করা যায়। সায়রার অভিযোগ, ওই পার্কিং পয়েন্টের অন্য পুরুষ চালকেরা তাঁকে সেখানে গাড়ি ঢোকাতে দেন না। জোর করলে গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। বাধ্য হয়ে কিছুটা দূরে গাড়ি দাঁড় করাতে বাধ্য হন সায়রা।

সায়রার আরও অভিযোগ, কোনও যাত্রীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথার সময় পার্কিং পয়েন্টের অন্য চালকেরা তাতে বাধা দেন এবং কম ভাড়ার প্রলোভন দেখিয়ে যাত্রীদের নিয়ে চলে যান। প্রতিবাদ করলে তাঁকে হুমকি শুনতে হয় বলে অভিযোগ। ফলে, নিজের বাড়ি থেকে পাঁশকুড়া স্টেশন পর্যন্ত মাত্র চার কিলোমিটার রাস্তায় যাতায়াতের পথে যে ক’জন যাত্রী পান, কম ভাড়াতেই তাঁদের গাড়িতে তুলতে বাধ্য হন সায়রা। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, গাড়ি কেনার জন্য নেওয়া ঋণ কী ভাবে শোধ করবেন, চিন্তায় পড়েছেন সায়রা। তিনি জানান, গাড়ির জন্য মাসে সাত হাজার টাকার কিস্তি হিসাবে সাড়ে তিন বছরে তাঁকে প্রায় তিন লক্ষ টাকা শোধ দিতে হবে। কিন্তু ওই সাত হাজার টাকা দিতেও তাঁর কালঘাম ছুটছে বলে দাবি এই মহিলা চালকের। সায়রা বলেন, ‘‘মহিলা বলে প্রতি পদে পদে হেয় হতে হচ্ছে। এই নিয়ে জেলাশাসকের অফিসে অভিযোগও জানিয়েছি। রেল কর্তৃপক্ষকেও বলেছি। কিছুই লাভ হয়নি।’’

কিন্তু এমনটা হচ্ছে কেন? এ ব্যাপার অবশ্য কোনও তথ্য নেই পাঁশকুড়ার আইএনটিটিইউসি নেতা জইদুল ইসলাম খানের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম কোনও ঘটনা জানা নেই। অভিযোগ পেলে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক পার্থ ঘোষের কথায়, ‘‘ভোটের আগে এই ধরনের দু-তিনটি অভিযোগ এসেছিল। পরিবহণ দফতরের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’

মহিলা বলে ‘হেনস্থা’ হতে হয়নি আর এক ‘ক্যাবি’ সবিতাকে। তিনি বলছেন, ‘‘মেয়েদের বাধা জয় করেই এগোতে হয়। যেখানে মেয়েরা মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছেন, সেখানে সামান্য গাড়ি চালাতে তো বাধা থাকার কথা নয়।’’

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Pink Cab Sayra Banu Panskura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy