ঝাড়গ্রামের সারদাপীঠ মোড় এলাকায়। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
জনজাতির তালিকাভুক্তির দাবিতে কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-সহ একাধিক কুড়মি সংগঠনের ডাকা ‘ঘাঘর ঘেরা’ আন্দোলনের প্রথম দিন শনিবার ঝাড়গ্রাম জেলার একাংশের জনজীবন ব্যাহত হল।
এদিন ভোর ৬টা থেকে ঝাড়গ্রাম শহরের সারদাপীঠ স্কুল লাগোয়া বিবেকানন্দ মোড়ে ৫ নম্বর রাজ্য সড়ক অবরোধ শুরু হয়। বৃষ্টির আশঙ্কায় ত্রিপল বাঁধা হয় সেখানে। কুড়মি সংগঠনের লোকজন জেলার বিভিন্ন রাস্তায় জমায়েত করেন। লোধাশুলি-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জেলায় কার্যত কোনও বাস চলেনি এদিন। বেলা গড়ালে শহর ফাঁকা হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে পর্যটকের সংখ্যাও অনেক কম ছিল এদিন। দুপুরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ অবরোধস্থলে আসে। অবরোধকারীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পুলিশ। এদিন আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ঝুমুর শিল্পী লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘এতদিন প্রশাসন কোথায় ছিল। এটা তো আমাদের অনেক আগের কর্মসূচি। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সবাই যোগ দিয়েছে।’’ সাঁকরাইলগামী রাজ্য সড়কের গুপ্তমণি, বাকড়া-সহ একাধিক জায়গাতেও অবরোধ হয় এদিন। সব জায়গাতেই সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবরোধ চলে।
কুড়মালি প্রবচন ‘ঘাঘর ঘেরা’র অর্থ, কোনও ফাঁক না রেখে চারদিক ঘিরে ফেলা। সোমবার ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের দফতরে ঘেরাও কর্মসূচি রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদেরও ঘেরাও করা হবে। মঙ্গলবার খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়ক অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ করার কথা। জরুরি পরিষেবার গাড়ি, স্কুলবাস ও পড়ুয়াদের ছাড় দেওয়া হলেও মাছ, আনাজ ও ফলের গাড়িকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদিবাসী কুড়মি সমাজও ৫ এপ্রিল থেকে খেমাশুলিতে লাগাতার টাটা-খড়্গপুর রেলপথ অবরোধ (রেল টেকা) ও জাতীয় সড়ক অবরোধের (ডহর ছেঁকা) কথা জানিয়েছে।
তাদের জনজাতির তালিকাভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধিত সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে গড়িমসি করছে রাজ্য সরকার, কুড়মি সংগঠনগুলির অভিযোগ এমনই। এর আগে গত বছর দুর্গাপুজোর আগেও টানা অবরোধ কর্মসূচি নিয়েছিলেন তারা। সেই পরিস্থিতি ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে। কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-এর নেতা রাজেশ মাহাতো বলেন, ‘‘শনিবার থেকে কর্মসূচি শুরু হয়েছে। পাঁচ শহিদের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে এদিন পুরুলিয়া থেকে সাইকেল যাত্রাও শুরু হয়েছে কলকাতার সিআরআই (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে। চার জেলায় অবরোধও হয়েছে। নির্ধারিত কর্মসূচি চলবে।’’
সাধারণত সপ্তাহান্তে ঝাড়গ্রাম জেলায় পর্যটকরা প্রচুর ভিড় জমান। তবে এদিন সেই ভিড় ছিল না। ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি টুরিস্ট কমপ্লেক্সের ম্যানেজার নিমাই ঘটক বলেন, ‘‘অন্য সপ্তাহান্তের তুলনায় এদিন পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই কম ছিল। যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে কিছুজন ফিরে গিয়েছেন। বাকিরা রয়েছেন।’’
রমজান মাস চলছে। বিভিন্ন স্কুলে পরীক্ষা চলছে। শুরু হয়েছে দুয়ারে সরকার। এর মধ্যে কুড়মিদের টানা কর্মসূচিতে আরও ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। কুড়মি নেতা রাজেশ বলছেন, ‘‘মানুষজনকে বলব আমাদের ৭৩ বছরের ভোগান্তির জন্য কয়েকদিন ভোগান্তি মেনে নিন।’’ জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, ‘‘এদিনের অবরোধের জন্য ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে কোনও প্রভাব পড়েনি। রমজান মাস চলছে, স্কুলের পরীক্ষা রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা হবে। আমরা ওদের (কুড়মি সংগঠন) অনেক অনুরোধ করেছি। ওরা সাড়া দেননি।’
শনিবার শালবনিতেও অবরোধ করেছেন কুড়মিরা। জাতীয় সড়কে অবরোধ হয়েছে। দক্ষিণশোলের কাছে অবরোধ হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরী বলেন, ‘‘কুড়মিদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দাবির কথা রাজ্য জানে। পদক্ষেপ চলছে। আশা করছি, সমাধান হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy