শুভজিৎ বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র
ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইতেও হার মানেনি। পরীক্ষার মাস দুয়েক আগে অস্ত্রোপচার করে ডান হাতের কনুইয়ের ওপর থেকে বাদ দিতে হয়। তবু জীবনযুদ্ধে জিততে মরিয়া এক সময়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা নৃসিংহপুরের শুভজিৎ বিশ্বাস বাঁ হাতে লিখেই মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে।
শান্তিপুরের হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নীলকুঠি পাড়ার বাসিন্দা শুভজিৎ বছর ছয়েক আগে সাইকেল দুর্ঘটনায় হাতে আঘাত পায়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে ধরা পড়ে তার হাতে বোন ক্যানসার। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসক দেখানোর পাশাপাশি কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা চলে। বছর দুয়েক পর থেকে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ২০২০ সাল নাগাদ শুভজিৎকে নিয়ে বেঙ্গালুরু পাড়ি দেন বাবা মা। সেখানে দীর্ঘ চিকিৎসার মধ্যে চালু হয় লকডাউন। আটকে পড়েন সকলে। বছরখানেক সেখানে চিকিৎসা করানোর পর বাড়িতে ফেরে শুভজিৎ। কিন্তু কিছুদিন সুস্থ থাকার পর ফের সমস্যা শুরু হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে গত বছর ডিসেম্বর মাসে কৃষ্ণনগরের একটি নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার করে ডান হাতের কনুইয়ের ওপর থেকে বাদ দিতে হয়। মাধ্যমিক পাশ করার স্বপ্ন তখন অনেক দূরে। পরীক্ষা কী ভাবে দেবে ছেলে, সেই দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম আসতো বাবা-মা’র। তবে লড়াই ছাড়েনি শুভজিৎ। মনের জেদ সম্বল প্রস্তুতি নিতে থাকে সে। রাত জেগে স্লেট নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে লেখার অনুশীলন করতে শুরু করে সে। কিছুটা হলেও আয়ত্তে আসে বাঁ হাতে লেখার অভ্যাস। অনভ্যস্ত সেই হাতেই পরীক্ষা দেয় শুভজিৎ। চেষ্টা বিফলে যায়নি।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা শুধু নয় পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গেও লড়তে হয়েছে শুভজিতকে। ছেলের চিকিৎসার বিপুল খরচ সামলাতে প্রচুর ধার দেনা হয়ে গিয়েছে তাঁতশ্রমিক বাবা ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাসের। বছর দুয়েক আগে ইন্দ্রজিৎ নির্মাণ শ্রমিকের কাজ নিয়ে এবং শুভজিতের মা শিখা পরিচারিকার কাজ নিয়ে কলকাতায় চলে যান। শুভজিৎ দু’বছর ধরে মাসির বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা চালিয়েছে। স্থানীয় হরিপুর হাইস্কুল থেকে এবার ১৮৩ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে নিজের স্কুলেই কলাবিভাগে ভর্তি হতে চায় শুভজিৎ। তার কথায়, ‘‘লড়াই করে যেতে চাই। ঠিকমত পড়াশোনা করে বড় হব।" বাবা ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছেলের লড়াইটা অনেক কঠিন ছিল। সরকারি কোনও সহযোগিতা পেলে উচ্চশিক্ষার জন্য সুবিধা হয়।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy