তখন বাড়িতে এল বাপ্পাদিত্য খুঁটিয়ার দেহ। নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতে ফিরল খড়্গপুরের নিহত সেনা কর্মী বাপ্পাদিত্য খুঁটিয়া (৩৩)-র কফিনবন্দি দেহ। ওই দিনই খড়্গপুরের কৌশল্যা শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার লাদাখের শিয়ক নদীতে পড়ে যায় সেনাবাহিনীর ট্রাক। ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। সেই তালিকায় রয়েছেন ল্যান্সনায়েক বাপ্পাদিত্যও। ঘটনার জেরে শোকের ছায়া নেমেছে খড়্গপুরের বারোবেটিয়া এলাকায়।ছেলে বাড়ি ফিরছে। কফিনবন্দি হয়ে। শুক্রবার সকালেই বাপ্পাদিত্যর মৃত্যুর খবরটা শেলের মতো বিঁধেছিল খড়্গপুরের বারোবেটিয়া এলাকার খুঁটিয়া পরিবারের সদস্যদের বুকে। শোকে ভেঙে পড়েছিলেন বাপ্পাদিত্যর আত্মীয়-পরিজনরাও। এই পরিস্থিতিতে বুকে শোকের পাথর চেপে রেখেই ছেলের জন্য শেষ বারের মতো সব রকম আয়োজন করে রেখেছিল খুঁটিয়া পরিবার। আদরের বাপ্পাকে শেষ বার দেখার জন্য বাড়ির একটি ঘরে তাঁর কফিন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সাজানো হয়েছিল ফুল দিয়ে। সকাল থেকেই বাড়ির সামনে ভিড় বাড়ছিল। সেই ভিড়ে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পতাকা হাতে।
রবিবার বেলা তখন সাড়ে ১২টা। বাড়ির সামনের রাস্তায় কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়। অনেকেই আদরের বাপ্পাকে শেষ বারের জন্য এক বার হলেও দেখতে চান। তত ক্ষণে বাড়িতে ভিড় করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনিক কর্তা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বও। ঠিক সেই সময়েই গাড়িতে চড়ে এল বাপ্পাদিত্যর কফিনবন্দি দেহ। সামরিক কায়দায় দেহ রাখা হল ঘরে।
এত ক্ষণ নিজেকে কিছুটা হলেও সামলে রেখেছিলেন বাপ্পাদিত্যর স্ত্রী জলি। কিন্তু স্বামীর দেহ দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। ভেঙে পড়লেন কান্নায়। বার বার মূর্ছাও যেতে দেখা যায় তাঁকে। পুত্রশোকে পাথর বাপ্পাদিত্যর মা রিনা। প্রতিবেশীরাও বাকরুদ্ধ।
বাপ্পাদিত্যর বাবা সুকুমার খুঁটিয়া অবসরপ্রাপ্ত আরপিএফ কর্মী। তিনি বললেন, ‘‘২০০৯ সালে আমার ছেলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। ছেলের এমন পরিণতির জন্য খারাপ লাগছে। তবে দেশ বাঁচানোর কাজে ওর মৃত্যু হয়েছে। এটা আমার কাছে গর্বের। ওর জন্য এত জন মানুষ আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন। ওদের জন্য আমরা শান্তি ঘুমোতে পারি। পরজন্ম থাকলেও বাপ্পা যেন আমার সন্তান হয়। আর ও তখনও যেন সেনাবাহিনীতেই কাজ করে। এ ছাড়া আমার আর কিছু বলার নেই।’’
রবিবার বিকেলে গান স্যালুটের পর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় বাপ্পাদিত্যর। ১১ মাসের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে বাপ্পাদিত্য এবং জলির। বাবার মৃত্যুশোক অবশ্য তাকে ছুঁতে পারেনি। রবিবার অন্যান্য দিনের মতোই আচরণ করতে দেখা যায় তাকে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy