ধ্বংসস্তূপ থেকে বার করে আনা হচ্ছে দেহ। — নিজস্ব চিত্র।
কেউ দেড় মাসের ছুটি কাটিয়ে ফের ফিরে যাচ্ছিলেন কাজের জায়গায়। কেউ যাচ্ছিলেন কাজের খোঁজে। তবে আর ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরা হবে না এদের অনেকেরই। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে পৌঁছে গিয়েছেন খেজুরির দুই গ্রামের পাঁট যুবক। পাড়ার তরতাজা এতগুলো প্রাণ চলে যাওয়ায় কার্যত শ্মশানের নিস্তব্ধতা গোটা এলাকায়। আর পাঁচটা দিনের মতো কোলাহলের ছবি উধাও হয়েছে রসুলপুর নদীর তীরে ছোট্ট গ্রাম বোগা ও দক্ষিণ শ্যামপুরে।
রবিবার সকালে প্রশাসনের তরফে খবর পৌঁছয় যে, ওই গ্রামের তিন যুবকের মৃত্যু হয়েছে ট্রেন দুর্ঘটনায়। পরে বিকেলে জেলা প্রশাসনের তরফে সর্বশেষ পরিস্থিতির খোঁজখবর সংক্রান্ত যে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে সেই তালিকা অনুযায়ী খেজুরিতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এঁরা হলেন শঙ্কর প্রধান, নন্দন প্রধান, ভোলানাথ গিরি, রাজীব ডাকুয়া ও সুমন প্রধান। এঁদের মধ্যে রাজীব ও সুমন দক্ষিণ শ্যামপুরের বাসিন্দা। বাকিরা বোগা গ্রামের।
গত দু’দিন ধরেই চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে গ্রামের আর সব পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের। এঁদেরই একজন খেজুরি- ২ ব্লকের উত্তর বোগা গ্রামের বাসিন্দা ভোলানাথ গিরি। পেশায় রাজমিস্ত্রি ভোলানাথ গ্রামেরই চারজনের সঙ্গে চেন্নাইতে কাজে গিয়েছিলেন। শুক্রবার রাত থেকে বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ভোলানাথের স্ত্রী উমা গিরি। তাঁর কথায়, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা নাগাদ পাড়়ার কয়েক জন এসে জানায় গ্রামের কয়েকজন যে ট্রেনে চেপে কাজে গিয়েছে সেই ট্রেনে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে লাগাতার স্বামীকে ফোন করেছি। কিন্তু সাড়া পাচ্ছি না।’’
ভোলানাথের সঙ্গেই গিয়েছিলেন আরেক প্রতিবেশী যুবক শঙ্কর প্রধান। দেড় মাসের ছুটি কাটিয়ে ফের যাচ্ছিলেন কাজে। স্ত্রী নিবেদিতা প্রধান বলেন, ‘‘বুধবার যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যায়নি। শুক্রবার সন্ধে ৬টা নাগাদ একবার ফোন করেছিলাম। তখন ট্রেন চলছিল। ছেলে আর আমার খোঁজ নিচ্ছিল। বলেছিল সাড়ে সাতটা নাগাদ টিফিন করার সময় ফোন করবে। আর ফোন আসেনি। সারা রাত ফোনের সুইচ বন্ধ ছিল। শনিবার সকাল থেকে মোবাইল ফোন বেজে যাচ্ছে। কেউ ধরেনি।’’ ছেলের শোকে বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন মা। মাঝে মধ্যে জ্ঞান ফিরলেই বলছেন, ‘‘এবার কী করে চলবে!’’
সুমন ভোলানাথের সঙ্গেই গিয়েছিলেন। তাঁর বাবা সুভাষ প্রধান বলছেন, "ট্রেন ছাড়ার আগে একবার ফোনে কথা হয়েছিল। তবে দুর্ঘটনার পর থেকে সকলেরই মোবাইল ফোনের সুইচ বন্ধ। আমার ছেলে কোথায় কিছুই খবর পাচ্ছি না। বাড়িতে সকলেই দুশ্চিন্তায়।’’ এই খবর লেখার সময়েও তাঁর কাছে পৌঁছয়নি ছেলের মৃত্যু সংবাদ।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার মৃত দুই যুবকের ময়না তদন্ত হচ্ছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে মৃতদেহগুলি গ্রামে নিয়ে আসা হবে। বাকি দুজনের মৃতদেহ তমলুক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে।
এদিন বোগা গ্রামে পৌঁছয় সিপিএমের জেলা পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল। তাঁরা মৃত এবং নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের লোকেদের সমবেদনা জানান। ট্রেন দুর্ঘটনায় খেজুরিতে একসঙ্গে পাঁচ জনের মৃত্যু প্রসঙ্গে কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসক দলকে নিশানা করে সিপিএম।
দলের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হিমাংশু দাস বলেন, ‘‘রেলের ব্যর্থতা আর কেন্দ্রীয় সরকারের অপদার্থতায় একেবারে নিঃস্ব,অসহায় পরিবারগুলো তাদের স্বজন হারালেন। এর হিসেব কে দেবে? ঘৃণ্য রাজনীতির কারণে রাজ্যের শাসক দল এদের মাথার উপরে পাকা ছাদটুকু করে দেয়নি।’’
করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় একসঙ্গে এতগুলো প্রাণহানির পর অজানা আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে জেলা থেকে চেন্নাইতে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের পরিবারগুলোকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy