গত এক বছরে বালির দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ বেড়েছে। ফলে আবাসের বাড়ি তৈরিতে হিমশিম খাচ্ছে আমজনতা। অনুমোদিত খাদান কম বলেই কি বালির দাম বাড়ছে?
ঝাড়গ্রাম জেলায় সরকারি অনুমোদিত বালি খাদান মাত্র চারটি। ফলে বালির দাম চড়ছে বলে মত ব্যবসায়ীদের। আবার একই জেলায় এলাকা ভেদে বালির দাম ভিন্ন। বেলপাহাড়ি ব্লকের বাঁশপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিদরি গ্রামের বাসিন্দা সমীর মাহাতো আবাসে বাড়ি পেয়েছেন।
সমীর বলছেন, ‘‘দু’শো সিএফটি বালি ১৭ হাজার টাকা নিচ্ছে। আগে বালির দাম অনেক কম ছিল। কোনও নজরদারি নেই। বালির দাম কম থাকলে বাড়ি তৈরি করতে সুবিধা হত।’’
ভূমি দফতর সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রামে একসময় ৭৩টি সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত খাদান ছিল। কমতে কমতে তা চারে এসে ঠেকেছে। এই চারটি খাদান হল— বিনপুর-১ ব্লকে দু’টি, গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকে একটি ও নয়াগ্রাম ব্লকে একটি। জানা গিয়েছে, শীঘ্রই আর দু’টি খাদান চালু হবে। ক্রমে জেলায় আরও ২০টি খাদান চালু হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) লক্ষ্মণ পেরুমল আর বলেন, ‘‘বালি খাদান রাজ্য থেকেই অকশন (নিলাম) হচ্ছে। যাঁরা সর্বোচ্চ দাম দিচ্ছেন, তাঁরাই খাদানের বরাত পাচ্ছেন।’’ তিনি জানান, ২০১৭ সালে বিনপুর-১ ও গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকে দু’টি খাদান নিলাম হয়েছিল। এনভায়রমেন্ট ক্লিয়ারেন্স (ইসি)-এ প্রক্রিয়াটি আটকে ছিল। সেই সমস্যা মিটেছে। ওই দু’টি খাদান শীঘ্রই চালু হচ্ছে। বাকি ২০টি খাদান চালুর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
এখন বালি খাদানের অনুমতি দেয় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলেপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড’। খাদান চালুর জন্য আগে জেলার থেকে অনুমতিপত্র চেয়ে পাঠানো হয়। জেলার কমিটি সবুজ সঙ্কেত দিলে ছাড়পত্র মেলে রাজ্য থেকে। টেন্ডারও রাজ্য থেকেই হয়। তবে বালির সরকার নির্দিষ্ট কোনও দাম নেই। চাহিদা অনুযায়ী দাম বাড়ে। এখন ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে আবাস যোজনায় কুড়ি হাজার বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ফলে, বালির চাহিদা বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে দামও বেড়েছে।এক বছর আগে ট্রাক্টর পিছু বালি দু’হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা দামে বিক্রি হত। এখন সেই বালি বিকোচ্ছে পাঁচ হাজারে। আবার ডাম্পারে যে বালি ছয় থেকে সাত হাজার টাকায় বিক্রি হত, তার দাম পড়ছে ১৬-১৭ হাজার টাকা পড়ছে। নয়াগ্রাম ব্লকের কলমাপুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা তনু পানিভরিয়া আবাসের বাড়ি পেয়েছে। তনু বলছেন, ‘‘২২০ সিএফটি বালি সাড়ে ন’হাজার টাকা পড়ছে। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে সুবর্ণরেখা নদী। তবুও ন’হাজার টাকা দিয়ে বালি কিনতে হচ্ছে।’’
অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) লক্ষ্মণ পেরুমলের দাবি, ‘‘ঝাড়গ্রামের থেকে অন্য জেলার বালির দাম আরও বেশি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)