Advertisement
E-Paper

পুজোর মুখে, কাজ হারালেন ৩৭৫ শ্রমিক

২০১০ সালে হলদিয়া শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভুঞ্যারায়চকে এই কারখানা তৈরি হয়েছিল। পাথর কেটে খনিজ মিশিয়ে ধাতব পাত উৎপাদন করত এই সংস্থা।

বন্ধ:  কারখানা ফের খুলবে তো? নিজস্ব চিত্র

বন্ধ: কারখানা ফের খুলবে তো? নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৭
Share
Save

দীর্ঘ আড়াই মাস অচলাবস্থা চলেছে। শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে গেল হলদিয়ার মডার্ন ইন্ডিয়া কনক্লাস্ট লিমিটেড। বুধবার শ্রম দফতরে ত্রিপাক্ষিক আলোচনায় রফাসূত্র না বেরনোয় কারখানা কর্তৃপক্ষ ঝাঁপ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে, শারদোৎসবের আগেই কাজ হারালেন ৩৭৫ জন কর্মী।

২০১০ সালে হলদিয়া শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভুঞ্যারায়চকে এই কারখানা তৈরি হয়েছিল। পাথর কেটে খনিজ মিশিয়ে ধাতব পাত উৎপাদন করত এই সংস্থা। দীর্ঘদিনের বিদ্যুতের বিল মেটাতে না পারায় গত ২৩ মে বিদ্যুৎ দফতরের পক্ষ থেকে ওই কারখানার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ওই দিন থেকেই যাবতীয় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তারপর মাস দুয়েক কারখানার অস্থায়ী শ্রমিকরা বেতন পাননি। আন্দোলনে শামিল হন তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরা। তারপর থেকেই অচলাবস্থা চলছিল এই কারখানায়। বন্ধ ছিল কাজ।

বুধবার অচলাবস্থা কাটাতেই শ্রম দফতরের আধিকারিক, কারখানা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপাক্ষিক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু জট কাটেনি। উল্টে বৃহস্পতিবার থেকেই স্থায়ীভাবে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয় ওই আলোচনাতেই। কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, ৪৫ দিনের মধ্যে দু’মাসের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়া হবে কাজ হারানো কর্মীদের। ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। হলদিয়ার ডেপুটি লেবার কমিশনার মিহির সরকার বলেন, ‘‘মর্ডান ইন্ডিয়া কনকাস্ট লিমিটেডের শ্রমিকদের অর্থনৈতিক দাবি-দাওয়া কারখানা কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছেন।’’

কিন্তু এই সংস্থানে কত দিন আর চলবে! পুজোর মুখে তাই দিশাহারা দশা কর্মহীন শ্রমিকদের। প্রায় আট বছর ধরে এই কারখানায় কাজ করতেন প্রদ্যোত দাস। বছর আটচল্লিশের প্রদ্যোত দুর্গাচক থানার পানা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘‘আগের বছরও বিশ্বকর্মা পুজোর আগে চরম ব্যস্ততা ছিল। এ বার আর কিছুই হবে না। আমাদের বেতনও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। বিভিন্ন জায়গায় আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’’ একই রকম হতাশ দুর্গাচক থানার ঝিকুরখালির বাসিন্দা এই কারখানার কর্মী মোর্তাজা গায়েন। তিনি প্রায় নয় বছর ধরে কাজ করতেন এই কারখানায়। মোর্তাজা বলেন, ‘‘পুজোর মুখে হঠাৎ এই আঘাত। আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। কী করে সংসার চালাব বুঝতে পারছি না।’’

কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের কাছে ১৭৫ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে সংস্থার। বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ সেই টাকা পেলে হয়তো কারখানা বন্ধ করতে হত না। তা ছাড়া, বিদ্যুতের মাশুল অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষতির বহর বেড়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ না নিয়ে যদি ডিভিসি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হতো তাহলে প্রতি ইউনিটে ১ টাকা ২৫ পয়সা করে বেঁচে যেত। সে ক্ষেত্রে ক্ষতি পরিমাণ কমত। কারখানার আসবাবপত্র এবং কাঁচামাল বিক্রি করে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন মেটানো হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন।

গত কয়েক বছরে হলদিয়ার বেশ কয়েক কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে। কাজ হারিয়েছেন স্থায়ী-অস্থায়ী বহু শ্রমিক। এই তালিকায় রয়েছে উড়াল ইন্ডিয়া লিমিটেড, এনার কুক লিমিটেড, কে এস ওয়েল প্রাইভেট লিমিটেড, হলদিয়া ছাড়তে বাধ্য হয় এবিজি-ও। বিদ্যুতের অত্যধিক মাশুল বৃদ্ধিতে ক্ষতির মুখে পড়ে রহিত ইনফোটেক নামে ধাতব ম্যাঙ্গানিজ থেকে পাত তৈরির আরেক সংস্থাও ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও চলছে।

জেলার বিএমএস নেতা প্রদীপ বিজলি বলেন, ‘‘অনৈতিক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ফলে বারবার এমনটা ঘটছে। ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে কারখানার কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। স্বভাবতই তাঁদের ক্ষতি হচ্ছে। আর ক্ষতি হলে কেন মালিকেরা কারখানা চালাতে চাইবেন?’’ হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডলেরও বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রয়োজনের তুলনায় বাড়তি লোক ওই কারখানায় ঢুকিয়েছে। এর ফলে লাভের বদলে কর্তৃপক্ষের উল্টে ক্ষতি হচ্ছে। তাতেই শিল্পশহর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন শিল্প সংস্থার কর্মকর্তারা।’’

আইএনটিটিইউসি-র জেলা কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকার বলছেন, ‘‘কোনও কারখানা হলদিয়ায় থাকবে কি থাকবে না এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমাদের তরফে মাথা গলানো হয় না।’’

Unemloyment Haldia Moder India Conclast Limited Job

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।