হিরাকনিয়া গ্রামে রামচন্দ্র কামিলার দোকান। নিজস্ব চিত্র।
নিজের পান-সিগারেটের দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন মধ্য বয়স্ক রামচন্দ্র কামিলা। দু’একজন পান কিনতে এসে বলাবলি করছিলেন পাঁশকুড়ার সাধুয়াপোতা গ্রামে বাজি বিস্ফোরণের ঘটনার কথা। মঙ্গলবার যে ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুনতে শুনতে বছর কয়েক আগের ঘটনাটা যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলেন রামচন্দ্র। সেদিনও আচমকা বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছিল কাঁথি-১ ব্লকের হিরাকনিয়া গ্রাম। নিষিদ্ধ আতসবাজি বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণটা ঘটেছিল তাঁরই বাড়িতে। পুড়ে গিয়েছিল বাড়ি। আট বছর বাদেও বিস্ফোরণে স্ত্রী আরতি, মেয়ে চম্পা, ভাইয়ের স্ত্রী পূর্ণিমা ও মাত্র আট মাসের নাতনিকে হারানোর বেদনায় চোখ জলে ভরে যায় রামচন্দ্রের। স্বজন হারানোর ব্যথা তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছিল বেআইনি বাজি বানানো কতটা ভয়াবহ। না, আর সে পথ মাড়াননি। এখন পান-বিড়ির দোকান চালান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সেদিনের কথা আর মনে করতে চাই না। এক মুহূর্তে গোটা জীবনটা উলটপালট হয়ে গিয়েছিল। এখন এই দোকানটুকু সম্বল করেই জীবন চলে।’’
রামচন্দ্রের বাড়িতে দুর্ঘটনা আমূল পরিবর্তন এনেছে গ্রামে। স্থানীয়রা বলছেন, গ্রামে আর আতসবাজি বানানো হয় না। রামচন্দ্রের দোকানের কাছ দিয়ে যে রাস্তা চলে গিয়েছে পিছাবনির দিকে, তার পাশেই এক বাজি কারিগরের বাড়ি। এক সময় কালীপুজোর আগে পরিবারের সকলেই ব্যস্ত থাকতেন বাজি তৈরির কাজে। মঙ্গলবার যখন বিস্ফোরণ ঘটল পাঁশকুড়ায়, সে সময় কার্যত নিস্তব্ধ তাঁর বাড়ি। পরিবারের লোকেরাই জানান, বাজি তৈরি ছেড়ে এখন মোটর বাইকে করে তাঁরা সামুদ্রিক মাছ ফেরি করেন এলাকায়। কেউ কেউ চলে গিয়েছেন অন্য পেশায়।
তবে পাশের গ্রাম হিরাকনিয়ার মতো বাজি তৈরি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি সিলামপুরে। এখনও গোপনে নিষিদ্ধ আতসবাজি বানানো চলে বলে অভিযোগ। উৎসবের মরসুমে গ্রামের প্রধান পাড়ায় কিছু কিছু বাড়িতে যে বাজি তৈরি হয় সে কথা বাজির ক্রেতারা ভালই জানেন। বাজির ক্রেতা হিসাবেই পা রেখেছিলাম প্রধান পাড়ায়। কোন বাড়িতে তৈরি হচ্ছে বাজি, তা বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। বাজি কিনতে চাই বললেও অচেনা মুখ হওয়ায় কেউ বাজি বিক্রির প্রসঙ্গ তুলতে চাইলেন না। পাশের গ্রামে বিস্ফোরণের ঘটনা থেকেও কেন শিক্ষা নেয়নি কেন সিলামপুর? প্রধান পাড়ায় পাকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রবীণ বলেন, “বেশি লাভের আশাতেই অনেকে বাজি বানায়। আগে অনেক পরিবার বাজি বানাত। প্রশাসনিক উদ্যোগে একাধিকবার সচেতন করা হয়েছে। এখন হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার বাজি বানায়।’’
বাজি কারবারিদের সংগঠনের অন্যতম কর্মকর্তা তুষার প্রধান বলেন, ‘‘আগে একবার অঘটন ঘটেছে এলাকায়। তাই প্রায় সকলেই পেশা বদলে ফেলেছেন।হাতেগোনা ৬-৭ জনের লাইসেন্স রয়েছে। সারা বছর অল্প বিস্তর আলোর বাজি তৈরি করা হয়। তবে পুলিশে ঝামেলা এড়াতে পুজোর মরসুমে বাজি তৈরি এবং বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’
কাঁথি-১ ব্লকের দুলালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুপ্রভা নায়ক বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের তরফে কাউকেই বাজি তৈরির জন্য ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয় না। তবু গ্রামে এখনও কয়েকজন বাজি তৈরি করে। তবে তারা নিয়ম মেনেই আতসবাজি তৈরি করে বলে জানি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy