রাস্তা বাড়ছে। বাড়ছে গাড়ি। কমবয়সিদের মোটর বাইক নিয়ে উচ্ছ্বাসে ঘটে দুর্ঘটনা। এ রকমই নানা বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। বাইকে ‘স্টান্টবাজি’ করলে তা কড়া হাতে দমনের কথা বলেন তিনি।
জেলায় ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’ পালনের সমাপ্তি উপলক্ষে শুক্রবার তমলুকের নিমতৌড়িতে ছিল অনুষ্ঠান। ছিল ড্রাইভিং লাইসেন্স মেলা। জেলা পুলিশ লাইন ময়দানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাস্তার সমস্যা নিয়ে নানা মেজাজে আলোচনা করছিলেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, ‘‘একদিকে রাস্তা বাড়ছে। রাস্তা চওড়া হচ্ছে। আবার রাস্তার দু’ধারে দোকান গজিয়ে উঠছে। ফলে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হচ্ছে। দিনের পর দিন গাড়ি কেনার মাত্রা বাড়ছে। আমি তো মজা করে বলি, আমাদের জেলাতে যতজন মানুষ তাঁর চেয়ে বেশি আছে মোবাইল। আর মোটর সাইকেল, সাইকেল ও গাড়ি সংখ্যা মিলিয়ে জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। সবাই যদি এক সঙ্গে বার হই রাস্তা খুঁজে পাব তো!’’
এরপরেই জেলাশাসক বলেন, ‘‘আর একটা কারণ আমাদের উন্মাদনা। আমাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশের সবচেয়ে বড় জায়গা রাস্তা। বাড়ি থেকে বেরোলাম। পকেটে কিছু টাকা। বাইকে স্পিড। আমাকে স্টান্টবাজি করতে হবে।’’ জেলাশাসক বলেন, “গতকাল এগরা থেকে আসছিলাম। চওড়া রাস্তা। একটা স্কুলের ২০-২৫ জন পড়ুয়া ছুটির পর সুন্দর করে সাইকেল চালিয়ে লাইন ধরে রাস্তা দিয়ে আসছিল। বিপরীত দিকে থেকে বাইক, মাথায় হেলমেট নেই। শুরু হল স্টান্টবাজি।... নিজে তো মরবেই। আরও পাঁচজনকে
মেরে মরবে।’’
জেলাশাসক বাইক নিয়ে কসরতের কড়া হাতে মোকাবিলার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এর জন্য কড়া অনুশাসন দরকার। মানে যাদেরকে এই ভাবে ধরা যাবে, এদেরকে বেধড়ক মারধর করে হাত-পা ভেঙে দিতে হবে। যাতে আর এরকম করতে না পারে।’’ এ দিন অনুষ্ঠানে ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সৌভিক চট্টোপাধ্যায়, জেলা পুলিশসুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত পুলিশসুপার নিখিল আগরওয়াল এবং জেলা পরিবহণ আধিকারিক সজল অধিকারী-সহ পদস্থ পুলিশ আধিকারিক।
পুলিশসুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় দিঘা পর্যটনে যাতায়াতের জন্য জাতীয় সড়ক-সহ বেশকিছু জাতীয় ও রাজ্য সড়ক রয়েছে। প্রতি বছর গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। তবে গত ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে জেলায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে।’’ পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ৪৯০ জনের। ২০২৪ সালে মৃত্যু হয়েছে ৪৭০ জনের।
এ দিন জেলা পরিবহণ আধিকারিক বলেন, ‘‘ড্রাইভিং লাইসেন্স মেলায় তমলুক মহকুমা এলাকার গাড়ি ও মোটর সাইকেল চালক মিলিয়ে মোট ২৮৮ জনকে ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ তুলে দেওয়া হয়েছে। পথ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য জেলার ট্রাফিক পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের পুরস্কার দেওয়া হয়। পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে আয়োজিত কুইজ প্রতিযোগিতায় জয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)