রাস্তা তো হবে। কিন্তু তার প্রস্তাবক হবে কে? তৃণমূল বিধায়ক নাকি দলের ব্লক সভাপতি! এই নিয়ে ফের প্রকাশ্যে শাসকদলের কোন্দল।
একদিকে ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি মাধবী বিশ্বাস। উল্টোদিকে জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ উজ্জ্বল দত্ত। একদিন নয়। তৃণমূল অন্দরের খবর, টানা দু’দিন নাকি দু’জনের মধ্যে তুলুম বাকবিতণ্ডা হয়েছে। পরিস্থিতি এমনই যে এ নিয়ে নালিশ পৌঁছেছে জেলা, রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্বের কাছেও।
ঘটনার সূত্রপাত গোপীবল্লভপুরের রাস্তা তৈরি নিয়ে। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, কিছুদিন আগে নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু তাঁর বিধানসভা এলাকার অধীন গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের একাধিক রাস্তা তৈরির জন্য সভাধিপতির কাছে নিজের প্যাডে প্রস্তাব পাঠান। প্রস্তাবিত রাস্তাগুলির ডিপিআর (ডিটেল প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরির জন্য জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পাঠান মাধবী। বিষয়টি জানতে পারেন জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ উজ্জ্বল। তৃণমূল সূত্রের খবর, উজ্জ্বলের সঙ্গে দুলালের সম্পর্ক ‘মধুর’। সোমবার জেলা পরিষদে এসে সরাসরি মাধবীর কাছে উজ্জ্বল জানতে চান, গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শঙ্করপ্রসাদ হাঁসদার সঙ্গে আলোচনা না করে কেন তিনি বিধায়কের প্রস্তাব মতো রাস্তার অনুমোদনের জন্য পদক্ষেপ করেছেন? মাধবী দাবি করেন, ব্লক সভাপতির সঙ্গে কথা বলেই তিনি বিধায়কের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পদক্ষেপ করেন। কয়েক জন কর্মাধ্যক্ষ জানান, মাধবী ও উজ্জ্বল দু’জনেই গলা চড়িয়ে ঝগড়া করতে থাকেন। সমস্যা মেটাতে মঙ্গলবার সব কর্মাধ্যক্ষ ও সভাধিপতিকে নিয়ে বৈঠক ডাকেন জেলা পরিষদের মেন্টর সোমনাথ মহাপাত্র। সেখানে শঙ্করপ্রসাদকেও তলব করা হয়। শঙ্কর সেখানে জানিয়ে দেন, তাঁর সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। ব্লক সভাপতি এ-ও জানান, তিনি যে সব প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন সেগুলির অনুমোদন না দিয়ে সভাধিপতি কেবলমাত্র বিধায়কের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, এরপর ফের উজ্জ্বল ও মাধবীর বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। জেলা পরিষদের মেন্টর সোমনাথ মহাপাত্র তাঁদের সামলান।
বুধবার জেলা পরিষদে গিয়ে দেখা যায় মাধবী আসেননি। তাঁর অফিস ঘর বন্ধ। উজ্জ্বলও আসেননি। উজ্জ্বল বলেন, ‘‘উন্নয়ন-কাজে ব্যক্তিস্বার্থ বলে কিছু নেই। সকলে জনস্বার্থে কাজ করছি। কাজের ক্ষেত্রে মতপার্থক্য হতেই পারে।’’ সভাধিপতি মাধবীকে ফোন করা হলে তাঁর সিকিয়োরিটি বলেন, ‘‘ম্যাডাম ব্যস্ত আছেন। পরে ফোন করুন।’’ পরে মাধবীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও প্রতিবারই বেজে গিয়েছে। এসএমএসেরও জবাব দেননি। জেলা পরিষদের মেন্টর সোমনাথ বলেন, ‘‘সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগ করেছিলেন উজ্জ্বল। সমস্যা মিটেছে।’’
গত পঞ্চায়েত ভোটে গোপীবল্লভপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। ওই ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটি বিজেপি-র দখলে, একটিতে তৃণমূল আর একটি সিপিএমের বোর্ড। উজ্জ্বল শিবিরের ব্যাখ্যা, সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হওয়া উচিত ছিল। মাধবী শিবিরের ব্যাখ্যা, বিধায়ক ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে গিয়ে মানুষের অভাব অভিযোগের কথা শুনছেন। তাঁর প্রস্তাবে আপত্তি কেন!
সমস্যার কথা মানছেন জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেন। তিনি বলেন, ‘‘জেলা পরিষদে সমস্যা হয়েছে। দু’জনের সঙ্গে কথা বলব।’’
বিজেপির অবশ্য কটাক্ষ, বাঁকা পথের ধারে কাটমানি থাকে। তাই তো পথ নিয়ে এত মারামারি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy