Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Dengue

নিকাশি নালায় মশার চাষ! ক্ষোভ

ঘাটাল হাসপাতাল। প্রতিদিন কয়েকশো রোগী জ্বর-সহ নানা কারণে এখানে আসছেন। সেই হাসপাতালের ক্যাম্পাস জুড়ে আবর্জনা। বহির্বিভাগের কাছাকাছি সবসময় জমে থাকছে জল।

ঘাটাল সুপার স্পেশালিটির ফিভার ওয়ার্ডের পিছনেই জমে রয়েছে জল ও আবর্জনা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

ঘাটাল সুপার স্পেশালিটির ফিভার ওয়ার্ডের পিছনেই জমে রয়েছে জল ও আবর্জনা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪ ০৮:২৭
Share: Save:

একদিকে রয়েছে প্রশাসনের দাবি। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। প্রশাসনিক পর্যায়ে বৈঠক, পরিকল্পনা তৈরি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ না থাকলেও তার প্রয়োগে যে সমস্যা থেকে যাচ্ছে তা বলাই যায়। ডেঙ্গির মশার নিয়ন্ত্রণে স্প্রে, পরিচ্ছন্নতায় জোর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বলছে অন্য কথা।

ঘাটাল হাসপাতাল। প্রতিদিন কয়েকশো রোগী জ্বর-সহ নানা কারণে এখানে আসছেন। সেই হাসপাতালের ক্যাম্পাস জুড়ে আবর্জনা। বহির্বিভাগের কাছাকাছি সবসময় জমে থাকছে জল। অনেক সময়ে হাসপাতালের ব্যবহৃত নানা সরঞ্জামও জমে যাচ্ছে এদিক ওদিক। ঘাটাল শহর জুড়েও একই পরিস্থিতি। ডেঙ্গি রোধে মুখে প্রচার ছাড়া এই শহরে তৎপরতা সে ভাবে চোখে পড়েনি। আগের চেয়ে সাফাই কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে নামমাত্র পরিষ্কার হচ্ছে বলে অভিযোগ। মূল নালা-সহ শাখা নালাগুলিও ঠিকঠাক সংস্কার হয় না। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বাড়ির অব্যবহৃত নোংরার সঙ্গে হাসপাতাল, নার্সিংহোমের নোংরা পড়ে নালার জলে। সংস্কার না হওয়ায় নালা উপচে সেই নোংরা উঠে আসে রাস্তায়। অভিযোগ, শুধু যে নালা সংস্কার হয় না তাই নয়, নালা অবরুদ্ধ করে গজিয়ে উঠছে স্থায়ী-অস্থায়ী নানা নির্মাণও।

কমবেশি একই ছবি মেদিনীপুর মেডিক্যালে। এর পাশেই রয়েছে বড় নিকাশি নালা।‌ সেটা নোংরা জলে ভর্তি।‌ কিলবিল করছে লার্ভা। এমন অবস্থা অদূরে স্টেডিয়াম রোডের নিকাশি নালায়। আশেপাশে রয়েছে একাধিক অস্থায়ী ভাতের হোটেল। মশার যেন চাষ হচ্ছে মেদিনীপুরের ইতিউতি! মেদিনীপুর পুর এলাকায় চলতি মাসে ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। যা দেখেই তড়িঘড়ি কয়েকটি এলাকা পরিদর্শনে বেরোয় পুরসভার দল। প্রথম গন্তব্য ছিল হাসপাতাল রোডই। অতীতেও এই জায়গা থেকে ডেঙ্গির মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল। পুরপ্রধান সৌমেন‌ খান বলেন, "পুরসভা অভিযান চালাচ্ছে। শহরের একাধিক এলাকায় মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক করেছি। না শুনলে প্রশাসনিক পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

খড়্গপুর শহরের কয়েকটি ওয়ার্ডে গত ১৫ দিনে একবারও স্প্রে করা হয়নি বলে অভিযোগ। ২৮ নম্বর ওয়ার্ড তলজুলির বাসিন্দা মহাদেব মণ্ডল বলেন, “আমাদের এলাকার নর্দমা পরিষ্কার নিয়মিত হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মশা মারতে স্প্রে করা চোখে পরেনি। দিন দু’য়েকের বৃষ্টিতে জল জমেছে। এ বার স্প্রে প্রয়োজন।” খরিদার বাসিন্দা বিজনলাল দত্ত বলেন, “দিন দশেক আগে স্প্রে করা হয়েছিল। এই কাজ নিয়মিত করতে হবে পুরসভাকে। মশা তো বাড়ছেই।” এ বার ডেঙ্গি আক্রান্তের তালিকায় জেলায় প্রথমে রয়েছে পিংলা। সেখানেও এখনও মশা নিয়ন্ত্রণে তেমন কাজ হয়নি।

জঙ্গলমহলের জেলার ঝাড়গ্রামের ছবিটাও প্রায় এক। ঝাড়গ্রাম ব্লকের নেদাবহড়া, রাধানগর, আগুইবনি, চন্দ্রী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নিকাশি নালা সেভাবে পরিস্কার হয়নি। যত্রতত্র জমে রয়েছে জল। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে এসব দেখভালের জন্য ভিআরপি আছেন। পঞ্চায়েতের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ভিআরপিরা শুধুমাত্র দু’একটি জায়গায় গিয়ে ছরি তুলে সংশ্লিষ্ট মহলে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বাস্তবে পুরো গ্রাম ঘুরে সরজমিনে খুব কিছু খতিয়ে দেখে রিপোর্ট সংগ্রহ করেন না। ঝাড়গ্রাম শহরেও বহু ওয়ার্ডে নিকাশি নালা পরিস্কার হয়নি। এই শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ডুমুর নালা তো কার্যত মশার আতুড়ঘর। অভিযোগ, ডুমুরনালা পরিস্কারের নামে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। কিন্তু বাস্তবে ডুমুরনালার কচু গাছ কাটা ছাড়া প্রায় কিছুই হয় না। ঝাড়গ্রামে পুরপ্রধান কবিতা ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘সমস্ত নিকাশি নালা পরিস্কার করা হচ্ছে। নালাগুলিতে মানুষ প্লাস্টিকের বোতল ও প্লাস্টিক ফেলে অবরুদ্ধ করে দিচ্ছেন। মানুষকেও সচেতন হবে।’’ (শেষ)

(তথ্য: অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে, দেবমাল্য বাগচী, রঞ্জন পাল)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE