Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
TMC

দুর্নীতির ‘জালে’ আরেক শাহজাহান 

তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সংখ্যালঘু সেলের সহ-সভাপতি দায়িত্বে রয়েছেন শেখ শাহজাহান। সম্প্রতি তাঁর একটি টাকা চাওয়ার ভিডিয়ো (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

An image of TMC

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২৪ ০৮:২৯
Share: Save:

সন্দেশখালির শেখ শাহজাহান দুর্নীতি মামলায় আপাতত জেলে। লোকসভা ভোটের আগে পূর্ব মেদিনীপুরের আরেক শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নামের পাশাপাশি দুই শাহজাহানের পরিচয়েও মস্ত মিল— তাঁরা দুজনেই তৃণমূল নেতা।

তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সংখ্যালঘু সেলের সহ-সভাপতি দায়িত্বে রয়েছেন শেখ শাহজাহান। সম্প্রতি তাঁর একটি টাকা চাওয়ার ভিডিয়ো (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) সমাজ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, শাহজাহান টাকা গুনছেন। তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমার ২০০০ টাকা লাগবে’। ভিডিয়োটি কয়েক বছরের পুরনো হলেও সম্প্রতি সেটি ছড়িয়েছে বলে দাবি।

শিল্পশহর হলদিয়ায় যে বাড়ির মধ্যে ভিডিয়ো রেকর্ড করা হয়েছে বলে দাবি, সেটি শহরের প্রিয়ংবদা এলাকায় রয়েছে। বাড়ি মালিক শেখ ইব্রাহিম আলি পেশায় ব্যবসায়ী। এ ব্যাপারে তিনি বলছেন, ‘‘আমার এক আত্মীয়র সরকারি চাকরির জন্য শেখ শাহজাহানকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম। শাজাহান আমার বাড়িতে এসে টাকা নিয়ে বলেছিলেন, দু’হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া বাবদ নেবেন। বাকি পুরো টাকাটাই সরকারি আধিকারিক দিয়ে দিতে হবে চাকরির জন্য। কিন্তু প্রায় ৩-৪ বছর হয়ে গেল চাকরিও হয়নি। টাকাও ফেরত পাইনি।’’

ভিডিয়ো সামনে আসার পরে শাহজাহানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন আরও অনেকে। হলদিয়ার এক বাসিন্দা সমরেশ সামন্ত বলেন, ‘‘শাহজাহান আমাকে বলেছিলেন খাদ্য দফতরে চাকরি করে দেবেন। বিনিময় পাঁচ লক্ষ টাকা দিতে হবে। টাকাটা দিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ পাইনি।’’ আরেক যুবক শেখ কামরুল আলম বলেন, ‘‘আমাকে সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন শাহজাহান। পরে বলেছিলেন পাঁচ লক্ষ টাকা লাগবে। তা দেওয়ার সামর্থ্য নেই বলে জানিয়েছিলাম। কিছু টাকা ফেরত দিলেও এখনও বেশ কিছু টাকা বাকি রয়েছে।’’

এ ব্যাপারে থানায় সে সময় অভিযোগ করেছিলেন?

ইব্রাহিম জানান, ওই সময় তাঁরা দুর্গাচক থানায় লিখিত অভিযোগ করতে যান। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। বরং থানা থেকে জানানো হয়, শাহজাহান নিজে এমন একটি দুনীতির শিকার হয়েছেন বলে ডায়মন্ড হারবারের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। সেই ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে। অপরেশের আবার দাবি ওই সময় থানা থেকে বলা হয়, ‘শাহজাহানকে মেরে হাত-পা ভেঙে দিন। কিন্তু অভিযোগ নেওয়া যাবে না’। দুর্গাচক থানা শাহজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেয়নি বলে দাবি শেখ কামরুল আলমেরও।

এত দিন পরে ভোটের মুখে ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। এবার ফের শাহজাহানের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ জানাবেন? সমরেশের জবাব, ‘‘সেই সময় অভিযোগ নেয়নি থানা। পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করলে ফের অভিযোগ করব।’’ পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ না নেওয়ার যে দাবি করা হচ্ছে সে ব্যাপারে জানতে ফোন করা হয় হলদিয়ার এসডিপিও অরিন্দম অধিকারীকে। তিনি বলছেন, ‘‘২০২০ সালের ঘটনা। ওই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিলে পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।’’

তবে টাকা যে একটা লেনদেন হয়েছে, তা কার্যত মেনে নিচ্ছেন তৃণমূল নেতা শাহজাহান। তবে তিনি শুধু সাক্ষী ছিলেন বলে দাবি করছেন। শাহজাহান বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে চাকরির প্রতিশ্রুতিতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। যাঁর বাড়িতে টাকা নেওয়া হচ্ছিল, সেখানে আমাকে সাক্ষী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমি মাত্র দু’হাজার টাকা নিয়েছিলাম। এর বেশি কোনও টাকা হাত করিনি আমি।’’ দলীয় নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি শেখ শাহানুল্লাহ খান বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার কানে এসেছে। প্রকৃত অনুসন্ধান করার পরেই মন্তব্য করব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Sheikh Shahajahan Haldia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy