Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Yaas

বাঁধ মেরামত হয়নি, কটালের আগে ভয়ে উপকূলবাসী

চিন্তা বাড়িয়েছে দিঘা-মন্দারমণি-তাজপুর-শঙ্করপুর এলাকায় সমুদ্রতীরবর্তী বাঁধের হাল।  

এমন অবস্থাতেই রয়েছে তাজপুর এলাকার সমুদ্র বাঁধ (বাঁদিকে)। গতবারের ক্ষতির চিহ্ন স্পষ্ট এখনও। নিজস্ব চিত্র।

এমন অবস্থাতেই রয়েছে তাজপুর এলাকার সমুদ্র বাঁধ (বাঁদিকে)। গতবারের ক্ষতির চিহ্ন স্পষ্ট এখনও। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শঙ্করপুর ও হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২১ ০৬:৩১
Share: Save:

ইয়াস-এর ঘা এখনও দগদগে। দিন কয়েকের মধ্যে অমাবস্যার ভরা কটালে ফের জলোচ্ছাসে আতঙ্কে কাঁপছে দিঘা-মন্দারমণি-তাজপুর-শঙ্করপুর থেকে খেজুরি, মায়াচর এলাকার মানুষ। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বহু মানুষের আশ্রয় কেড়ে নিয়েছে। তার সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় ফের কটালে প্লাবনের আশঙ্কায় ঘুম উড়েছে সমুদ্র ও নদীর উপকূলের বালিন্দাদের। ইয়াসের পর বিভিন্ন জায়গায় কটালের কথা ভেবে যুদ্ধাকালীন তৎপরতারয় নদীবাঁধ মেরামতির নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকার। সেইমতো কিছু কিছু জায়গায় কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু অমাবস্যার কটালে জলের চাপ কতটা আটকানো যাবে তা সংশয়ে ওই সব এলাকার বাসিন্দারাই। পাশাপাশি তাদের চিন্তা বাড়িয়েছে দিঘা-মন্দারমণি-তাজপুর-শঙ্করপুর এলাকায় সমুদ্রতীরবর্তী বাঁধের হাল।

প্রথমে আমপান। তারপর বছর ঘুরতেই ইয়াস। বঙ্গোপসাগরের তীব্র জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর-১ ব্লকের দশটির বেশি গ্রাম। বাঁধ ছাপিয়ে সমুদ্রের নোনা জল ঢুকে এখনও প্লাবিত বহু এলাকা। সৈকতের ধারে ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে আছে কংক্রিটের বাঁধ। ১১ জুন অমাবস্যার ভরা কটাল।শঙ্করপুর, চাঁদপুর, জামড়া শ্যামপুর, লছিমপুর, ভেড়িচাউলি, জলধা, তাজপুর—একাধিক গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এখনও বহু জায়গায় সমুদ্র বাঁধ সারানোর কাজ শুরু হয়নি। আবার বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকে সর্বস্ব হারানোর আশঙ্কায় দুর্গতেরা। ভেড়িচাউলি গ্রামের বলরাম মাল বলেন, ‘‘যে গতিতে কাজ হচ্ছে, তাতে অমাবস্যার আগে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। চার কিলোমিটার জুড়ে সমুদ্রের কংক্রিটের বাঁধ ভেঙেছে। কী ভাবে ঠেকাবে! মুখের কথা। আমরা প্রচণ্ড ভয়ে আছি।’’ চাঁদপুর গ্রামের বায়া বেরার কথায়, ‘‘এই কালো পাথর দিয়ে কটালের জল ঠেকানো কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। যে টুকু বাঁচার আশা ছিল তাও বোধহয় শেষ হয়ে গেল।’’

মঙ্গলবার ইয়াস পরবর্তী পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা। কটালের আগে সমুদ্র বাঁধ মেরামতির কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে। এ ব্যাপারে সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার উত্তম কুমার হাজরা বলেন, ‘‘হুগলি এবং হলদি নদীর যে সব অংশে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সে সব জায়গায় সারানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্রুতগতিতে সমুদ্র বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।’’

রামনগর-১ এর বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, ‘‘কটালের কথা মাথায় রেখে ১৪টি মৌজার লোকেদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।’’

অমাবস্যার কটালে সিঁদুরে মেঘ দেখছে মায়াচরবাসীও। ইয়াসে রূপনারায়ণেপ বাঁধ ভেঙে গিয়ে মায়াচরের সিংহভাগ অংশ ছিল জলের তলায়। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছিল মানুষকে। মাছের ভেড়ি এবং কৃষির প্রচুর ক্ষতি গয়েছে। বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ফের কটালের জেরে সেই কাজ কতটা টিকবে তা নিয়ে চিন্তায় মায়াচরবাসী। মঙ্গলবার মায়াচর হাইস্কুলে মহিষাদল ব্লকের তরফে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ শিবির করা হয়। মহিষাদলের বিডিও যোগেশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘১১ জুনের মধ্যে মায়াচরের বাঁধের কাজ শেষ করা হবে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে সেচ দফতরের তরফে।’’ রাজ্যের সেচ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘১১ ও ২৬ জুনের কটালের কথা মাথায় রেখে উঁচু করে ব্ল্যাক স্টোন দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চলছে। বর্ষা চলে গেলে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’’

মন্ত্রী বললেও ঘরপোড়া উপকূলের মানুষকে ডরাচ্ছে কটালের সিঁদুরে মেঘ।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy