মেয়েকে বাঁচাতে এ ভাবেই মন্ত্রী হাত-পা ধরে অনুরোধ করেছিলেন মৃত কিশোরীর পরিজনেরা। — ফাইল চিত্র।
‘ক্যাচ’-এর বাংলা নাকি প্রভাব!
সরকারি হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করলেই কানে আসবে ‘ক্যাচ পেসেন্ট’ শব্দবন্ধ। আসলে অন্য কিছু নয়। এই ধরনের রোগীরা তাঁরা, যাঁদের প্রভাবশালী যোগ রয়েছে। রোগীর পরিবারের একাংশের অভিযোগ, যে যোগের সুবাদে হাসপাতালে প্রায় সব সুবিধা, পরিষেবা পান তাঁরা। যাঁদের সে যোগ নেই? তাঁরাও পরিষেবা পাবেন। তবে কখন, কতটা পরিষেবা মিলবে তা জানে অদৃষ্টই। পরিস্থিতি সারসত্য বুঝতে পিছিয়ে যেতে হবে মাত্র কয়েকটা দিন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন কিশোরী সুপ্রিয়া রায়ের মা রিঙ্কু রীতিমতো পা ধরেছেন মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার। তাঁর কাতর আর্জি ছিল— দয়া করে মেয়েকে বাঁচান। হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। অর্থাৎ সাধারণ রোগীর মা হাসপাতালে অন্য কাজে আসা মন্ত্রীকে দেখে হাতে যেন চাঁদ পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন মন্ত্রী বললেই হাসপাতালে ভাল চিকিৎসা হবে। বেঁচে যাবে মেয়ে। না, এমনটা হয়নি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছিল বছর তেরোর সুপ্রিয়ার।
গত বছরের ঘটনা। গলব্লাডারের সমস্যা নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছিল বিনপুরের প্রাক্তন বিধায়ক দিবাকর হাঁসদাকে। অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু শুরুতে তাঁরই শয্যা জোটেনি! ঠাঁই হয়েছিল হাসপাতালের মেঝেয়। ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বিনপুরের সিপিএম বিধায়ক ছিলেন দিবাকর। বিষয়টি জানাজানি হতে পরে অবশ্য তাঁকে শয্যার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। ভর্তির সময়ে জানাননি যে আপনি প্রাক্তন বিধায়ক? সে দিন দিবাকরের জবাব ছিল, ‘‘আমি কি নিজে বলব যে, আমি প্রাক্তন বিধায়ক। আমাকে শয্যা দিন।’’
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যালই। এখানকার পরিকাঠামো, পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। এটা বাস্তব যে, চাহিদা-যোগানের সহজ সমীকরণে এ সমস্যা আপাতত কাটিয়ে ওঠা হয়ত যাবে না। কিন্তু রোগীর পরিজনদের একাংশের অভিযোগ, সমস্যা বাড়ে ‘ক্যাচ পেসেন্ট’দের জন্য। হয়তো জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন নেই তবু ওই ধরনের রোগীরা বেড দখল করে রাখেন। পরিষেবার সুযোগ পান। স্রেফ প্রভাবের জন্য। মেডিক্যালে ‘ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে’ (সিসিইউ) শয্যা রয়েছে ২০টি। অনুযোগ, একাংশ শয্যা দখল করে রাখেন ‘ক্যাচ পেসেন্ট’রাই! সমস্যা তো বিস্তর? হাসপাতাল সুপার জয়ন্ত রাউত বলেন, ‘‘পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। একে একে সেই সব সমস্যার সমাধানের চেষ্টাও চলছে।’’
ঝাড়গ্রামেও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। হাসপাতালে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেত্রীর বাবাকে সিসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছিল। দীর্ঘ কয়েকদিন ধরে ভর্তি রেখেও তাঁকে সুস্থ করা যায়নি। তাঁর মৃত্যু হয়। মৌখিকভাবে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও রোগীকে রেফার করার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। সেই নেত্রীও চাননি তাঁর বাবাকে রেফার করা হোক। হাসপাতালের পরিকাঠামোগত সমস্যা বেআব্রু হোক, চাননি ওই নেত্রী। ঘাটাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে আগের চেয়ে পরিকাঠামো বেড়েছে। প্রসূতি বিভাগই হোক কিম্বা মেডিসিন। প্রভাবশালীদের ফোনে রোগীদের পরিষেবাও বদলে যায়। সময় নিয়ে রোগীকে দেখা কিম্বা সরকারি সবরকম পরিষেবা সহজেই পৌঁছে যায় রোগীর বেডে। তা ছাড়া অন্য ক্ষেত্রেও প্রভাবশালী রোগীরা বাড়তি সুযোগ পান। অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে বাড়তি সুযোগ মেলে। শল্য বিভাগ কিম্বা চোখের অস্ত্রোপচারের তারিখ প্রভাবশালী যোগ থাকলে কম সময়ে পাওয়া যায়।
তাই কি সুপ্রিয়ার মাকে পায়ে ধরতে হয় মন্ত্রী বিরবাহার।
ক্রিকেট ক্যাচ ফস্কালে ম্যাচ ফস্কে যায় । সরকারি হাসপাতালে— জীবন?
(তথ্য সহায়তায়: বরুণ দে, কিংশুক গুপ্ত, অভিজিৎ চক্রবর্তী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy