মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে আরও এক বার নিজের আপত্তির কথা জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ‘এক দেশ এক ভোট’ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সচিব নীতেন চন্দ্রকে একটি চিঠি দিয়েছেন মমতা। তবে সেই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নয়, তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী হিসাবে নিজের ছ’দফা আপত্তির কথা জানিয়েছেন তিনি। লোকসভার সঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচন করা যায় কি না, তা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলির মতামত জানতে চেয়েছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
আপত্তির কথা জানিয়ে চিঠির শেষে মমতা লেখেন, “আমি দুঃখিত যে এক দেশ এক ভোট ধারণার সঙ্গে একমত হতে পারছি না। আমরা এই প্রস্তাবকে সমর্থন করছি না।” চিঠিতে মমতা প্রথমেই ‘এক দেশ’ ধারণাটির সারবত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জানান যে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোবিশিষ্ট দেশে একটি কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও একাধিক সরকার রয়েছে। এই প্রসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, তার পরেও ‘এক দেশ’ বা ‘ওয়ান নেশন’ ধারণায় কী ভাবে আসা হচ্ছে? চিঠিতে মমতা লেখেন, “আমি স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তাই আমি আপনাদের (কেন্দ্র) এই পরিকল্পনারও বিরুদ্ধে।”
দেশের সর্বত্র লোকসভা ভোটের সঙ্গে বিধানসভা ভোট এবং অন্যান্য স্থানীয় ভোট করার একাধিক সমস্যা রয়েছে বলেও চিঠিতে জানান তিনি। ‘এক দেশ এক ভোট’ রূপায়ণ করতে কেন পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত বিধানসভাকে আগে ভেঙে দেওয়া হবে কিংবা কোনও বিধানসভার মেয়াদ পাঁচ বছর পরেও বৃদ্ধি করা হবে, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। এ ক্ষেত্রে গণতান্ত্রক ব্যবস্থার প্রতি মানুষ আস্থা হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। তা ছাড়া টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই লোকসভা ভেঙে দেওয়া হলে এবং নতুন করে ভোট নেওয়ার প্রয়োজন পড়লে বিধানসভাগুলিকেও ভেঙে দেওয়া হবে কি না, সে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের দলনেত্রী।
‘এক দেশ এক ভোটে’র জন্য গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি রাজ্য সরকারগুলির কোনও মতামত না নিয়েই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত বাকিদের জানাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর আরও অভিযোগ, বাস্তব পরিস্থিতি উন্মোচিত হয়ে যাবে, এই আশঙ্কা থেকেই কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে রাখা হয়নি। প্রকৃতিগত ভাবে লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন সম্পূর্ণ পৃথক বলেও চিঠিতে দাবি করেন মমতা। নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হলে সংবিধানেও প্রয়োজনীয় বদল আনতে হবে বলে জানান তিনি। ‘এক দেশ এক ভোট’ চালু হলে দেশে বৈচিত্রের পরিবেশ এবং সংবিধানের মূল কাঠামোর ধারা ক্ষুণ্ণ হবে বলেও দাবি করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
‘এক দেশ এক ভোট’ নীতির পক্ষে আরও একটা যুক্তি হল, আলাদা আলাদা নির্বাচন মানে প্রতি ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যায় জনবল অর্থাৎ সরকারি কর্মী ও অফিসারদের নিয়োগ করতে হয়। ফলে সরকারি কাজ ব্যাহত হয়। এ ছাড়া দফায় দফায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী আদর্শ আচরণবিধি প্রয়োগের ফলেও সরকারি কাজ ব্যাহত হয়। একসঙ্গে ভোট হলে পাঁচ বছরে এক বার মাস দেড়েকের জন্য আদর্শ আচরণ বিধি চালু থাকবে। তাতে উন্নয়ন থমকে থাকবে না। এই নীতি কার্যকরের দিকগুলি খতিয়ে দেখার জন্য ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়েছে কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy