জয়ের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে অভিষেকের কন্যা আজানিয়া। রবিবার কালীঘাটে। ছবি: সুমন বল্লভ
ভবানীপুরের খেলা শেষ হবে ভারত জয়ে—প্রচারে এমন দাবি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার রেকর্ড ব্যবধানের জয়ের পরে দলনেত্রীর সেই দাবিকে রাজনৈতিক স্তরে নিয়ে গেল তৃণমূল। লোকসভা ভোটকে নজরে রেখে বিজেপি- বিরোধী শিবিরের যোগ্যতম মুখ হিসাবে মমতার নাম সামনে নিয়ে এলেন দলের নেতারা। তবে এ দিনও তৃণমূলের এই উদ্যোগকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।
জাতীয় স্তরে বিজেপি- বিরোধী শিবিরের মুখ কে হবেন, তা নিয়ে টানাপড়েন ছিলই। বিশেষ করে বিধানসভা ভোটে এ রাজ্যে দলের সাফল্যের পরে প্রকাশ্যে সেই জোটের নেতৃত্ব দাবি করে তাতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছিল তৃণমূল। এ দিন ফল ঘোষণার পরে সর্বভারতীয় স্তরে তাঁদের সেই গ্রহণযোগ্যতার দিকে ইঙ্গিত করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘ভবানীপুরে ৪৬ শতাংশ অবাঙালি ভোটার। আমি সব ভাষাভাষির ভোট পেয়েছি। এখানে গুজরাতি, মারওয়াড়ি, বিহারি, ওড়িয়া ভাষী লোক আছে।’’ ভবানীপুরে যে ওয়ার্ডগুলি অবাঙালি অধ্যুষিত বলে চিহ্নিত, সেগুলিতেও তাঁর জয়ের কথা আলাদা করে উল্লেখ করেছেন মমতা।
তৃণমূলের বক্তব্য ছিল, কংগ্রেস বা রাহুল গাঁধী কোনও ভাবেই নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প নন। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য মুখ হতে পারেন মমতাই। নেতা হিসেবে রাহুল সম্পর্কে তৃণমূলের এই ‘অ্যালার্জি’ নিয়ে প্রকাশ্যে আপত্তি জানিয়েছিল কংগ্রেসও। তবে ভবানীপুরের এই ফলের পরে দলের সেই বক্তব্যকে আরও জোরদার করল তৃণমূল। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘বিজেপিকে মমতা শুধু হারাননি, তাদের জায়গাও ছোট করে আনতে পেরেছেন। আমরা যে কথা বলেছি ভবানীপুরে সব ভাষা, ধর্মের মানুষ তাতে সিলমোহর দিয়েছেন। তাই বিরোধী জোটের নেতৃত্বে মমতা প্রশ্নহীন।’’
গণনার প্রতিটি রাউন্ডে মমতার এগিয়ে থাকায় বড় ব্যবধানে জয়ের ইঙ্গিত ছিল এ দিন সকাল থেকেই। তখনই কালীঘাট সংলগ্ন এলাকায় তৃণমূলনেত্রীর ছবি সহ একটি ব্যানার লাগাতে শুরু করেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। সেই ব্যানারেও সর্বভারতীয় রাজনীতিতে দলনেত্রীর নিশানা স্পষ্ট লেখা ছিল, ‘মোদীশাহঅসুরমর্দিনী।’
ভবানীপুরের এই জয় নিয়ে সংশয় ছিল না তৃণমূলের। এখানে ব্যবধান বাড়িয়ে নন্দীগ্রামের ক্ষতপূরণ যে সম্ভব, তা নিয়েও নিশ্চিত ছিলেন দলের প্রথমসারির নেতারা। তাই জাতীয় স্তরে দলের লক্ষ্য সামনে এনে উপনির্বাচনে তৃণমূলনেত্রীর অন্যতম সেনাপতি ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘এই ঝড় থেকেই মোদী- বিরোধী যাত্রা শুরু করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ মমতাকেই কি মুখ হিসাবে তুলে ধরছেন তাঁরা? এই প্রশ্নের উত্তরে ফিরহাদ বলেন, ‘‘কোনও দল মুখ হিসাবে কাউকে তুলে ধরলে তিনি মুখ হন না। তিনি যে মুখ তা নিজেই প্রমাণ করেছেন।’’ এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্য ও গোয়ায় সক্রিয় হয়েছে তৃণমূল। সেই প্রসঙ্গে ফের কংগ্রেসকে খোঁচা দিয়ে দলের অন্যতম মুখপাত্র সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় এ দিন বলেন, ‘‘জাতীয় স্তরে বিরোধীদের জোট নিয়ে সবার আগে তৎপর হয়েছিলেন মমতাই। কংগ্রেস চুপ করে বসে থাকলেও আমরা তা পারি না। কারণ তৃণমূল একটি রাজনৈতিক দল। এনজিও নয়।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অবশ্য তৃণমূলের এই দাবি খারিজ করে এ দিন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হতে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাবেন, তাঁকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশে এতটাই জনপ্রিয় যে, ওঁর ( মমতার) যাত্রা দ্বিতীয় স্থান থেকে শুরু হবে। তার পর সেটা তৃতীয় বা চতুর্থ স্থান— কোথায় শেষ হবে, তা জানি না।’’
ভবানীপুরের ফল ঘোষণার পরে মমতাকেই বিরোধী জোটের মুখ হিসেবে উল্লেখ করেছেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। মমতাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এবং সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব। কংগ্রেস শিবির থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন মমতা ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কমল নাথ এবং আনন্দ শর্মা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy