হাই কোর্টে কমিশনের বিরুদ্ধে হলফনামা রাজ্যের। —ফাইল চিত্র।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আচরণের অভিযোগ তুলল রাজ্য। তাদের অভিযোগ, ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’ নিয়ে কমিশন যে রিপোর্ট কলকাতা হাই কোর্টে জমা দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভাবে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
হাই কোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে রাজ্য বলেছে, বাংলার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিতে বেছে বেছে কমিশনের এমন সদস্যদের নিয়োগ করা হয়েছিল, যাঁদের সঙ্গে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যোগসাজস খাতায় কলমে প্রমাণিত।
কমিশনের রিপোর্ট আগেই খারিজ করে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সোমবার তার জবাবে কলকাতা হাই কোর্টে হলফনামা জমা দিয়েছে রাজ্য। তাতে কড়া ভাষায় কমিশনের সমালোচনা করেছে তারা। বলা হয়েছে, ভোট পরবর্তী হিংসার সামগ্রিক দায় রাজ্য প্রশাসনের ঘাড়ে চাপিয়েছে কমিশন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। বরং যখনই হিংসার ঘটনা সামনে এসেছে, পুলিশ এবং প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগও জানাতে হয়নি, পুলিশ নিজেই স্বতঃপ্রণোদিত ব্যবস্থা নিয়েছে।
‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের যে সদস্যদের বাংলায় পাঠানো হয়, বেছে বেছে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছে রাজ্য। হলফনামায় কমিশনের তিন সদস্যের সঙ্গে সরাসরি ভাবে বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। হলফনামায় সুনির্দিষ্ট ভাবে কমিশনের তিন সদস্যের উল্লেখ করেছে রাজ্য। বলা হয়েছে, এককালে বিজেপি-র আইটি সেলের দায়িত্ব সামলানো রাজীব জৈন, অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের প্রাক্তন নেতা তথা বিজেপি-র টিকিটে ভোটে দাঁড়ানো আতিফ রশিদ, যিনি কি না বিজেপি যুব মোর্চার জাতীয় স্তরের কর্মকর্তাও, এবং গুজরাত বিজেপি-র মহিলা মোর্চার সদস্য তথা বিজেপি-র একাধিক প্রকল্পে যুক্ত রজুলবেন এল দেসাই। বাংলার নির্বাচিত সরকারকে অপদস্থ করতেই এঁদের নিয়োগ করা হয় বলে অভিযোগ রাজ্যের।
রাজ্যের যুক্তি, মানবাধিকার কমিশন একটি নিরপেক্ষ এবং পক্ষপাতহীন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে, একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে কমিশনকে ব্যবহার করা হয়েছে। ২ মে ভোটের ফল ঘোষণার পর কিছু জায়গায় হিংসার ঘটনা ঘটে। কিন্তু ৫ মে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই উল্লেখযোগ্য ভাবে তা কমে যায় বলে হলফনামায় দাবি করেছে রাজ্য। বর্তমানে রাজ্যে হিংসার কোনও ঘটনা নেই বললেই চলে।
শুধু তাই নয়, কমিশন এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছে বলেও অভিযোগ রাজ্যের। তাদের দাবি, কমিশনকে অভিযোগ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল হাই কোর্ট। কিন্তু তার ঊর্ধ্বে গিয়ে কমিশন সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেছে। মামলা রাজ্যের বাইরে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে তদন্তের সুপারিশও করেছে তারা, যা তাদের এক্তিয়ারের বাইরে। এর সপক্ষে উপযুক্ত কারণও দেখাতে পারেনি কমিশন। আসলে, আগে থেকেই গোটা পরিকল্পনা করে রাখা হয়েছিল বলে রাজ্যের তরফে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। এর সঙ্গে তদন্তের কোনও যোগ নেই বলেও জানিয়েছে রাজ্য। গোটা বিষয়টিই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মত রাজ্যের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy