মমতার বক্তৃতা শুনতে দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বিরোধী শিবিরের নেতৃত্ব।
নন্দীগ্রাম থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। নরেন্দ্র মোদী বরং বারাণসী সামলান। ২০২৪-এ সেখানে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে তাঁকে। গত ১ এপ্রিল রাজ্যে দ্বিতীয় দফার ভোট চলাকালীন এমন দাবিই করেছিল তৃণমূল। বুধবার তৃণমূলের শহিদ দিবসে ফের বিজেপি-কে চ্যালেঞ্জ জানাল বাংলার শাসকদল। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে বিজেপি-কে দিল্লি ছাড়া করার ডাক দিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলাফল যাই হোক না কেন, প্রস্তুতিতে কোনও খামতি থাকা চলবে না বলে জানিয়ে দিলেন তিনি।
এর আগে, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপি-বিরোধী জোটকে সমর্থন জানিয়েছিল তৃণমূল। সে বারও বিরোধী জোটে মমতার ভূমিকা নিয়ে নানা জল্পনা সামনে এসেছিল। কিন্তু ২০১৪-র থেকেও বড় ব্যবধান নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছিল বিজেপি। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভার নির্বাচন সব হিসাব উল্টে দিয়েছে। সিপিএম-কংগ্রেসের ভোট ‘শুষে’ নিলেও, তৃণমূলকে ছুঁতে পারেনি বিজেপি। ২০০ পেরনোর স্বপ্ন ছোঁয়া তো দূরঅস্ত্, দুই অঙ্কও পেরোতে পারেনি তারা। বাংলার নির্বাচনের এই ফলই আগামী লোকসভা নির্বাচনে নতুন করে ঘুঁটি সাজাতে উৎসাহ জুগিয়েছে বিজেপি-বিরোধী শিবিরকে। তাতে মমতার ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনাও চলছে। কিন্তু প্রকাশ্য তা নিয়ে ঝেড়ে কাশছিলেন না কেউ। কিন্তু বুধবার একুশের মঞ্চে আর কোনও রাখঢাক করলেন না মমতা। স্পষ্ট ভাবে বলে দিলেন, ‘‘একটা খেলা হয়েছে, খেলা আবার হবে। বিজেপি-কে দেশ থেকে তাড়ানো না পর্যন্ত রাজ্যে রাজ্যে খেলা হবে।’’
Didi is winning Nandigram. The question of her fighting from another seat doesn't arise. @narendramodi Ji, retract from your efforts to mislead people before they see your lies with the end of nomination in WB. Look for a safer seat in 2024, as you will be challenged in Varanasi.
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) April 1, 2021
দিন এবং মুহূর্তের নিরিখে মমতার এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৯৩ সালে ২১ জুলাই তাঁর ডাকা মহাকরণ অভিযানেই ১৩ জনের প্রাণ গিয়েছিল। সেই ঘটনাই তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক জীবনের গতিপথ ঠিক করে দেয়। আর সেই দিনেই দিল্লি থেকে বিজেপি-কে তাড়ানোর পণ নিলেন তিনি। আর এমন সময় পণ নিলেন, যখন আক্ষরিক অর্থেই তাঁর দিকে তাকিয়ে দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে বসে ছিলেন বিজেপি-বিরোধী শিবিরের তাবড় নেতা। তাঁদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, ‘‘গণতন্ত্র ভয়ঙ্কর জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে। এখানে নির্বাচন কমিশনের আশীর্বাদের হাত ছিল বিজেপি-র মাথার উপর। ২০২৪-এ কী হবে জানি না। তবে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। একজোটে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হন। ফ্রন্ট গড়ে তুলুন। নির্বাচনের সময় জোট গড়ে লাভ নেই। এটাই সঠিক সময়। যত দেরি করবেন, ততই সময় নষ্ট হবে। আমি দিল্লি যাচ্ছি।’’
সংসদের বাদল অধিবেশন চলায় বিরোধী জোটের নেতাদের অধিকাংশই বর্তমানে দিল্লিতে রয়েছেন। গত কয়েক মাসে দফায় দফায় ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাঁরা। তাতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে তাঁর ভূমিকা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। ঘটনাচক্রে মমতার একুশের কর্মসূচিতে যোগ দিতে বুধবারই কলকাতায় এসেছেন প্রশান্ত। প্রশান্ত কত দিন কলকাতায় থাকবেন, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানা যায়নি। তবে ২৬ জুলাই অর্থাৎ আগামী সোমবারই দিল্লি রওনা দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। ফিরবেন ৩০ জুলাই, শুক্রবার। তিনি দিল্লিতে থাকাকালীন বিরোধী জোট গড়া নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করতেও শরদ পওয়ার, পি চিদম্বরমদের অনুরোধ করেন মমতা। মমতা বলেন, ‘‘এ নিয়ে আলোচনা হোক। আমি থাকব বৈঠকে।’’
গেরুয়া শিবির যদিও মমতার এই চ্যালেঞ্জকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। বুধবার তৃণমূলের একুশের পাল্টা কর্মসূচি রেখেছিল বিজেপি। সেখান থেকে দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য সভাপতি অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘‘২০১৯-এও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন উনি। কিন্তু সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। এ বারও মুখ থুবড়ে পড়বেন। স্বৈরতান্ত্রিক শাসন বলতে যা বোঝায়, বাংলায় মমতা তা-ই চালাচ্ছেন।’’
তবে বিজেপি নেতৃত্ব কটাক্ষ করলেও, আগামী লোকসভা নির্বাচনে মমতার ভূমিকাকে খাটো করে দেখতে নারাজ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, বিজেপি-র কাছে নরেন্দ্র মোদীর বিপুল জনপ্রিয়তা, অর্থ, প্রযুক্তি সব ছিল। তা-ও ‘ভাঙা পায়ে’ তাদের ‘গোল’ দিয়েছেন মমতা। জনকল্যাণমূলক প্রকল্পকে সামনে রেখে ভোটের প্রচার চালিয়ে গিয়েছেন। তাতেই সাড়া দিয়েছেন বাংলার মানুষ। একুশের মঞ্চে বিরোধী জোটের সূচনা করতে গিয়েও সেই জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের কথা উঠে এসেছে তাঁর মুখে।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের বছর তিনেক বাকি। জোটও চূড়ান্ত হয়নি। কিন্তু মমতা আগেভাগে ঘোষণা করে দিয়েছেন, বিরোধী জোট ক্ষমতায় এলে গোটা দেশে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হবে। তিনি নিজে তা নিশ্চিত করবেন। গুজরাত নয়, বাংলার মডেলকে সামনে রেখেই এগোবেন বলে জানিয়েছেন তিনি— যেখানে কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্প রয়েছে, কৃষকদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়, কৃষকের মৃত্যুতে পরিবার ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পান, বিনামূল্যে জমির মিউটেশন করে দেওয়া হয়।
মমতার মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্প সামনে রেখে এগোলে, বিরোধী জোটের সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা খারিজ করতে নারাজ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy