বড়জোড়ায় দুর্গতদের ত্রাণ বিলি মমতার। সোমবার। ছবি: বিকাশ মশান
কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগের অভাবেই বাংলার মানুষের বাড়ি ডুবছে, অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বর্ধমানে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন তিনি। তার পরে বাঁকুড়ার বড়জোড়ার সীতারামপুর মানায় বন্যা পরিস্থিতি দেখতে যান। সেখানেই মমতা বলেন, “রাজনৈতিক ভাবে যা লড়াই, আমাদের সঙ্গে লড়ো। কিন্তু জেনেবুঝে জল ছেড়ে মানুষের প্রাণ নিয়ো না।” এ দিন তাঁর আশ্বাস, তিন বছরের মধ্যে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজ করা হবে।
বর্ধমানে বৈঠকের পরে মমতা বলেন, “ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেই আমাদের চিন্তা হয়। জলটা ছেড়ে দেয় নিজেদের বাঁচাতে। গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান, ফ্লাড কন্ট্রোল, ডিভিসি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা কোনও কাজ না করার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘর ডুবে যাচ্ছে।” তাঁর প্রস্তাব, “নির্বাচনে যে টাকাটা আমরা খরচ করি, বড় বড় বিল্ডিং বানিয়ে, মূর্তি বানিয়ে যে টাকাটা খরচ করে, দয়া করে কেন্দ্রীয় সরকার তার এক-চতুর্থাংশও যদি আমাদের দেয়, গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান, ফ্লাড কন্ট্রোলটা আরও ভাল করে করতে পারি।”
ফের বৃষ্টির পূর্বাভাসে মমতা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁর আশঙ্কা, জলমগ্ন জেলাগুলিতে আবার বৃষ্টি হলে এবং ডিভিসি ফের জল ছাড়লে পরিস্থিতি খারাপ হবে। ডিভিসির বোর্ড ও কমিটি থেকে প্রতিনিধি প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি। আমাদের দু’জন সদস্য ছিলেন, তাঁদের কিছু জানানো হত না। বার বার বলে যখন কাজ হয় না, বাংলার এই বঞ্চনা আমরা মানব না।” বিহার প্লাবিত হলে বাঁধ কেটে জল ঢুকিয়ে দেয়, মালদহ-মুর্শিদাবাদে প্লাবন দেখা দেয়— এমন অভিযোগও তোলেন মমতা। রাজ্যের বিরুদ্ধে কুৎসা না করার আর্জি জানিয়ে তাঁর বক্তব্য, “পাঁচটা কাজ করতে গেলে একটায় ভুলভ্রান্তি কারও হতে পারে।”
প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে বর্ধমানের বৈঠকে সেচ দফতরের এক কর্তা মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্নের মুখে পড়েন। পরে মমতা বলেন, “ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের কাজে ৪০০ কোটি টাকা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। তিন বছর সময় লাগবে কাজটা করতে। কেন্দ্র করেনি, আমরা করব।” রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা দাবি, “মাস্টারপ্ল্যানের এখন কোথায় কী? এখনও জমি অধিগ্রহণ হয়নি। এই দেউলিয়া সরকারকে কে জমি দেবে?” তার পরে তিনি বলেন, “২০২৬ সালে বিজেপির সরকার হবে। বিজেপি মাস্টারপ্ল্যান করবে।”
রাজ্যের মতামতকে আমল না-দিয়ে জল ছাড়া হচ্ছে বলে মমতা যে অভিযোগ এ দিনও করেছেন, এ প্রসঙ্গে বিরোধীদের তাঁকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, “ডিভিসির অপদার্থতা নিশ্চয়ই রয়েছে। আবার আইনেই বলা আছে, ডিভিসি নিয়ে রাজ্য প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চাইতে পারে।” তার পরেই সেলিমের প্রশ্ন, “খুনি, ধর্ষকদের বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী কোর্টে যাচ্ছেন, তা হলে এ ক্ষেত্রে যাচ্ছেন না কেন?”
কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীরও বক্তব্য, “যদি বাংলাকে না-জানিয়ে জল ছেড়ে মানুষকে ডুবিয়ে দেওয়া হয়, সে জন্য আদালতে যাওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রী প্রতি বছর একই কথা বলছেন, কিন্তু আদালতে যাচ্ছেন না।”
রাজ্যের সেচমন্ত্রী তথা প্রবীণ নেতা মানস ভুঁইয়ার পাল্টা প্রশ্ন, “সব বিষয়ে আদালতে যেতে হবে কেন? এ দেশে কি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy